সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মোট ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এ লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চূড়ান্তভাবে আগামী দুইদিনের মধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে যেসব বিতর্কিত লোক আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে গেছেন, সেগুলো বাতিল করে যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের সাথে এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ৮৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন যে বা যারাই পাবেন তাদের মধ্যে কেউ বিতর্কিত থাকলে অবশ্যই তা প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের যোগ্য ও ত্যাগীদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে দলের দপ্তরে মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন রয়েছে। এরপর দলের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উদাহরণ হিসাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোরের পাতাকে বলেন, নাটোর সদর উপজেলার ৪ নং লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নে মো. আলতাব হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আজগর আলী ভূঁইয়া লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগটি আমালে নেয়া হয়েছে। কয়েকটি সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ দেয়া হয়েছে মনোনয়ন প্রাপ্ত আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে। সেগুলো তদন্ত চলছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মাদ্রাসার টাকা আত্নসাৎকারী, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে অভিযুক্ত মাদকাসক্ত আলতাবের মনোনয়ন বাতিল করে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়ার কাজ হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ভোরের পাতাকে বলেন, নাটোর সদর উপজেলার ৪ নং লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে অভিযোগের বিষয়টি গত শুক্রবার বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কারা এমন বিতর্কিত লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষ হয়ে গেলেই যতজন বিতর্কিত নৌকার মনোনয়ন পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই তা তদন্ত করে সেখানে পরিবর্তন করা হবে। এক্ষেত্রে নাটোরের ৪ নং লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নে যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আলতাব হোসেনের পরিবর্তন হচ্ছে এটা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা যায় বলেও মনে করেন দলের প্রভাবশালী এই নেতা। কারণ শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবেই বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে, ওবায়দুল কাদের ভোরের পাতাকে আরো বলেন অনেক সময় ভুল হতেই পারে, তবে সেই ভুলগুলো আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগের মুহুর্তে হলেও শুদ্ধ করে দিবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতে এবং শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৭ অক্টোবর নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এসব ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করে। এরমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে রায়নগর ইউনিয়নে শাহজাহান কাজী একই ইউনিয়নের বাগমারায় একটি মাদরাসায় চাকরি করতেন, সেই মাদরাসার গাছ চুরির অপরাধে তিনি জেল খাটেন এবং চাকরি হারান। মাঝিহট্ট ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মন্ডল দীর্ঘদিন বিদেশ ছিলেন। দেশে ফিরেই তিনি হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। এরপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাঁকে সভাপতি ঘোষণা করা হলে আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলমান।
শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা নয়। তবে, দলের তৃণমূল থেকে তিনজন করে প্রার্থীর যে তালিকা পাঠানো হয়, সেটিই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিলো। সেই তালিকা থেকেই এসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের সবুজ নামের এক যুবকের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকার বিপরীতে চেক প্রদান করলেও টাকা পায়নি সবুজ, ফলে আদালতে তিনি মামলা করেন। শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের আবু তালেব আকন্দ জাতীয় পার্টি ও বিএনপি হয়ে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। খামারকান্দি ইউনিয়নের আব্দুল মোমিন এক সময় ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। মির্জাপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী মন্টু বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য জি এম সিরাজের মালিকানাধীন এস আর গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে এখনও কাজ করেন।
শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকল প্রার্থীর অতীত রেকর্ড দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কারণ মাঠ পর্যায়ের নেতারাই তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। হয়তো কারো বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকতে পারে, তবে অন্যান্য উপজেলার মতো সেসব গুরুতর অভিযোগ নয় বলে দাবি করেন তিনি।