চাকরি মানেই বর্তমান বাজারে সোনার হরিণ। তার সঙ্গে যদি থাকে দলীয় ক্ষমতা তাহলে তো কথাই নেই। এমনই অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) পরিচালক (যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগ) ইমাম জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে। তিনি চাকরি ক্ষমতা অপব্যবহার করে জনবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। এ বিষয়ে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।সোসাইটির একজন পরিচালক তার ইমেইল থেকে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমান পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সংস্থাটির সদর দপ্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের গত ১২মে সোসাইটির ‘ডিসিআরএম’ বিভাগের ‘জিআরআইপি’ প্রকল্পের স্কিল ডেভলপমেন্ট অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৮জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী পরীক্ষার্থী সৈয়দ আতাউর রহমানের পরীক্ষার হলে বসে প্রশ্ন ও পূর্বে তৈরীকৃত উত্তরপত্র বের করে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লিখতে থাকেন। এ সময় পরীক্ষার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ ও সহকারী পরিচালক মিস ফারজানা আক্তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র জব্দ করে।
জব্দকৃত প্রশ্নপত্রটি কমিটির আহবায়কের কাছে জমা দিলে তিনি দেখতে পান যে, সোসাইটির পরিচালক ‘ডিসিআরএম’ ইমাম জাফর শিকদার-এর ইমেইল থেকে সেটি উক্ত পরীক্ষার্থীর ইমেইলে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রশ্নের সাথে জব্দকৃত প্রশ্নের শতভাগ মিল রয়েছে। উক্ত ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন-মো. মাহাবুবার রহমান তালুকদার, আহবায়ক। মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল, সদস্য। এডভোকেট সোহানা তাহমিনা, সদস্য। আলহাজ গাজী মোজাম্মেল হক, সদস্য। এবং মো. তৌহিদুর রহমান, সদস্য। এই কমিটিকে ঘটনাটি তদন্ত করে একটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম এর স্বাক্ষরে গত ১৪ ই মে ২০২৪ এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, অভিযুক্ত পরিচালক (যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগ) ইমাম জাফর শিকদার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলায়। তিনি বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ট আত্মীয়। তিনি ‘বরিশাল বিএল কলেজ শাখা’ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।
সোসাইটির সবার কাছেই তিনি আপদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে স্বীকৃত। ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে গুঞ্জন চলছে। এছাড়া ভুয়া বিল-ভাউচারে সোসাইটির প্রচুর টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন বলে প্রচার আছে। তিনি সোসাইটির একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। আজ প্রায় ২৫ বছর এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। এর আগে তাজনুর আহমেদ সেওতি নামে জাতীয় সদর দপ্তরের যুব প্রধান (নারী) চেয়রম্যান বরাবরে সেক্সচুয়াল হেরাজমেন্ট ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দীর্ঘদিন যাবত বেনামে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন। তার ঠিকাদারী ২টি ফার্মের নাম প্রগ্রেসিভ ও ফারহান ইঞ্জিনিয়ারিং। সোসাইটিতে বেনামে ঠিকাদারী ব্যবসা, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য করে তিনি শত কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব টাকায় তিনি কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, ঢাকা ও বরিশালে বেশ কয়েকটি বাড়ী নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ঢাকায় তার আলীশান ফ্ল্যাট আছে। ২ খানা গাড়িও ক্রয় করেছেন। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি অবসরে যাবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতাকে অপব্যবহার সব সময়ই করেন। চাকরি জীবন থেকেই তিনি অপব্যবহার করে আসছেন। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সুযোগে তিনি সে দলের লোক হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।