প্রকাশ: শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৮:৫৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সাভারে বসবাসকারী জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খানের বিরুদ্ধে পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসিন মোল্লা। বুধবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকের (তদন্ত ও অনুসন্ধান) মাধ্যমে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর এই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসিন মোল্লা গোপালগঞ্জ জেলার মুকশেদপুর থানার ধুপালী গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে সাভার পৌরসভার আইচানোয়াদ্দা এলাকায় বসবাস করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মাত্র আঠারো বছর সরকারী চাকরী করে কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলেন? সাভার উপজেলার সিআরপি হাসপাতালের মেইন গেটের ঠিক দ¶িন পাশে এইচএল টাওয়ার (হোল্ডিং নং-৩) নামক দশ'তলা ভবন এবং এর নীচে অবস্থিত অসপ্রে ফিজিও থেরাপী ও ডায়াগনস্টিক হাসপতালের মালিক সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খান। এছাড়া সাভার নিউ মার্কেটে তার তিনটি দোকান ও ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সাভার উপজেলার আইচানোয়াদ্দা মৌজাতেই এ সরকারি কর্মকর্তার রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। যা লাল কুঠির (হোল্ডিং নং-৩০/১২৭) নামে পরিচিত। সাভার সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চাপাইন ও ৭নং ওয়ার্ডের শাহিবাগে কয়েকটি প্লট রয়েছে। যার কোনটা তার মায়ের নামে, কোনটা তার বোনের নামে আবার কোনটা তার ভাইয়ের নামে। তাছাড়াও ঢাকার আসাদ গেট ও গুলশানে রয়েছে কোটি টাকার ফ্লাট। ঢাকা-টাংগাইল মহাসড়কে রয়েছে সিএনজি-ও তেলের পাম্প, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কোটি টাকার এফডিআর'। স্ত্রী পুত্রের নামেও রয়েছে অঢেল অনেক সম্পদ। সরকারি চাকুরি করে ঘুষের টাকায় প্রভাবে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে একের পর এক তৈরি করছে বিলাসবহুল কটেজ, পার্ক, বাগান/বাড়ি। এসব জায়গায় ভোগ বিলাস, নাচ গান, নারী নিয়ে ফুর্তিসহ বাগান বাড়িতে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থায় সাইনবোর্ড লাগিয়ে চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সন্ত্রাসীর আড্ডা চলে তার বাগান বাড়িতে। পাশে থাকা মাদ্রাসা ও মসজিদের সাধারন ছাত্র ও মুসল্লিগন আতঙ্কে থাকে সন্ত্রাসীদের ভয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় নব্বইয়ের দশকে সিরাজগঞ্জ থেকে তার বাবা রেডিও অফিসের এক সাধারন পদে চাকুরীর সুবাদে এসে সাভার সদর ইউনিয়নের চাপাইন গ্রামে ৪ শতাংশ জমি কিনে টিনসেডে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে ছেলে হাফিজুল্লাহ খান সরকারি কর্মকর্তা হলে রাতারাতি পাল্টাতে থাকে তাদের অবস্থা। বাবার রেখে যাওয়া জমির পাশে পদ ও ¶মতার ব্যবহার করে ছলেবলে কৌশলে আশে পাশের জমির মালিকদের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এখন এদের পরিবারে লোকরাই শত কোটি টাকার মালিক। ঢাকা জেলায় এসি ল্যান্ড থাকা অবস্থায় ভূমির খাজনা খারিজ বাবদ কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করে দুর্নীতির অভিযোগে বদলি হয়। ২০০৯ সালে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন এক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তাকে বদলি করা হয় ভেদরগঞ্জে। সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তী হয়ে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগে মাত্র এক মাসের মাথায় শাস্তিমূলক বদলী করা হয় এবং পরবর্তীতে ওএসডি হন। একজন সরকারী কর্মচারী কিভাবে দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেছন অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসিন মোল্লা।
দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসম অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট। সিআরপি এলাকায় আমার মায়ের একটি বাড়ি আছে এবং শাহীবাগ এলাকায় আমাদের একটি জমি আছে। এই জমিটি ২০০৬ সালে গর্ত হিসেবে কেনার পর মাটি ফেলে সমান করা হয়। তারাই লোকজন দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আমিও বিষয়টি তদন্তের জন্য দুদককে সাধুবাদ জানাই। তদন্ত হলে সত্য মিথ্যা সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
দুদুকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দূর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (তদন্ত) কর্মকর্তা মো. রেজানুর রহমান বলেন জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খানের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসিন মোল্লা দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী কমিশনে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ বিধি অনুসরণ করে কমিশনে অভিযোগ গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাই সেল’ রয়েছে। কমিশনে সাধারণত ডাকযোগে, ই-মেইলে, হটলাইনে এবং জেলা ও বিভাগীয় অফিসগুলোতে থাকা অভিযোগ বাক্সে অভিযোগগুলো আসে। নাম-ঠিকানা থাকলে প্রত্যেকটি অভিযোগের প্রাপ্তি করা হয়। পরে তারিখ ও ক্রমিক নাম্বার দিয়ে অভিযোগগুলো দুদকের প্রধান কার্যালয়ের যাচাই বাছাই সেলে পাঠানো হয়। এই সেল বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও উৎস থেকে কমিশনে আসা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে থাকে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অভিযোগ আসে। অভিযোগ এরই মধ্যে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে।