কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার ধীরগতির ভূখণ্ডগত অগ্রগতি ও মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্র মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমশ উদ্বিগ্ন করছে। তাদের আশঙ্কা, যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত গতি অর্জন করছে মস্কো। একের পর এক এলাকা দখলের সঙ্গে মার্কিন হিমার্স ব্যবস্থাও ধ্বংস করছে।
সম্প্রতি, রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে নতুন স্থল অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে এরইমধ্যে সেনা ঘাটতিতে পড়া ইউক্রেন নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে তাতে ঠেকানো যায়নি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা। সেখানের বহু এলাকা দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা।
রুশ বাহিনীর চাপে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর খারকিভের সীমান্ত অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম থেকে ইউক্রেন তাদের সেসা প্রত্যাহার করেছে। একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, সেনারা প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিলো এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দুটি এলাকায় ‘আরও সুবিধাজনক অবস্থানে’ চলে গেছে।
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের আরও দুটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে খারকিভের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় আকস্মিক স্থল অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। তাদের হামলায় টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেন সেনবাহিনী।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার সময় রাশিয়া সেনাবাহিনী খারকিভ শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা আবার সীমান্তে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য দেখাচ্ছে রুশ বাহিনী।
পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক যে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সব আসন্ন বিদেশ সফর বাতিল করেছেন কারণ সেনারা নতুন আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে, বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম হামলার কবলে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামনের সব বিদেশ কর্মসূচি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলেনস্কি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারকিভে ভূখণ্ড দখলে রাশিয়ার প্রকৃত কৌশলগত লক্ষ্য হলো শহরটিতে অতিরিক্ত সেনা পাঠাতে ইউক্রেনকে বাধ্য করা। বিশেষ করে ইউক্রেনের রিজার্ভ ও এলিট সেনাদের খারকিভে নিয়ে আসা। যাতে করে রণক্ষেত্রের অন্য এলাকা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে জুনে দনবাসে রাশিয়াকে আরেকটি অভিযান পরিচালনার সুযোগ এনে দেবে।
এই পরিস্থিতিতে, কিয়েভকে প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেয়া জোরদার করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ কিছু কিছু ঘটনায় রাশিয়া সফলভাবে জিপিএস রিসিভারকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমার্স ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পেরেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর দেয়া কামান ও ড্রোনগুলোকে অকার্যকর করে দিচ্ছে রাশিয়ার ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধকৌশল। দেরিতে এই কৌশল নিলেও তা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, প্রায় সময় রাশিয়া দুর্বলভাবে যুদ্ধ শুরু করে কিন্তু শেষ করে সবলভাবে। বিশাল জনসংখ্যা থেকে সেনা সংগ্রহ ও সামরিক অবকাঠামো দিয়ে ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া। একাধিক কারণে রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতিতে বেড়েছে।
মার্কিন সহযোগিতায় বিলম্বের কারণে কামানের সুবিধা ইউক্রেনের চেয়ে বেশি পেয়েছে রাশিয়া। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গোলার ঘাটতির কারণে রাশিয়া অনেকটাই নির্বিঘ্নে বিমান হামলা চালিয়ে যেতে পেরেছে। গ্লাইড বোমা নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা রেখায় আক্রমণ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সব অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে পৌঁছার পর নতুন দখল করা অনেক অঞ্চল থেকে রুশদের বিতাড়িত করা সম্ভব হবে। এগুলো ইউক্রেনে পৌঁছাতে জুলাই মাস চলে আসবে। মার্কিন অস্ত্র সহযোগিতার মতো বিলম্বিত হয়েছে ইউক্রেনের নতুন সেনা সংগ্রহ। এছাড়া নতুন সেনাদের প্রশিক্ষণে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহেও হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।
ভোরের পাতা/আরএস