প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ১২:১৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ
'অন্ধজনের কিবা রাত্রি, কিবা আবার দিন, সুন্দর এই পৃথিবী হায়রে রইলো অচিন'। না ! পৃথিবী দেখা তার অচিন হলেও সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছেন ঐতি রায় (১৫)।
জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে 'এ' গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।
সোমবার (১৩ মে) সরেজমিনে গিয়ে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়ীতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সাথে। আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এই রেজালা ভাবতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে তার মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই।
একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে করে এস এসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাশ করেছে।
ঐতির রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির স্কুলে এবং পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এস এসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা প্রচন্ড খুশি, শ্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান তারা। এজন্য ঐতির পরিবার সরকারের সহযোগিতা চান।
এবিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে (হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) দেও, বাকিটা আমি বুঝব। এরপর ঐতি রায়কে খুব যত্ন করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাশে অত্যান্ত মেধাবী ছিল। আজ ঐতি ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ' এ' গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাশ করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। দোয়া করি ঐতি তার মেধা বিকাশিত করে অনেক বড় হবে।