ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সিকদার গ্রুপ ও সিকদার পরিবার নিয়ে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ও অনুমান নির্ভর অসত্য তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে। এনিয়ে সিকদার গ্রুপ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। জনমনে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে কোম্পানী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান সাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা প্রদান করছে সিকদার গ্রুপ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিকদার গ্রুপ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম জয়নুল হক সিকদারের ছয় দশকেরও অধিক পরিচালিত ঐতিহ্যবাহি একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সিকদার গ্রুপের অনেক অবদান রয়েছে। কতিপয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে সব অভিযোগ ও তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অবান্তর। কোন বৈধ সংস্থার রেফারেন্স ছাড়াই তা উল্লেখ করা হয়েছে। সিকদার গ্রুপ এ ধরনের মনগড়া, ভুল ও উদ্দেশ্যমুলক এবং প্ররোচনা সৃষ্টিকারী সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সিকদার সিকদার পরিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের সকল শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, সিকদার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শেয়ারও কারো কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এধরনের শেয়ার হস্তান্তরের কোন পরিকল্পনাও নেই। আমরা আমাদের গ্রাহক ও শুভাকাঙ্খিদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, সিকদার গ্রুপ তাদের কোন কোম্পানীর কোন মালিকানা বা সম্পত্তি কারো কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে অন্য কোন গ্রুপের সাথে কোন ধরনের আলোচনাও করেনি।
একটি কুচক্রিমহল দীর্ঘদিন যাবৎ মরহুম জয়নুল হক সিকদারের দুই কনিষ্ঠ পুত্র রিক হক সিকদার এবং রন হক সিকদারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে একটি গোষ্ঠির স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা দেশের চলমান উন্নয়ন ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। প্রকাশিত সংবাদগুলোতেও ঢালাওভাবে নানা অভিযোগ করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যার কোন সঠিক তথ্য ও প্রমাণ উপস্থান করা হয়নি। পঞ্চাশ উর্ধ্ব রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদারের হাতে-খড়ি তাদের শ্রদ্ধেয় পিতা জয়নুল হক সিকদারের মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া শেষে তারা আরাম-আয়েশের জীবন কাটাতে পারতেন। তা না করে তারা দেশে এসে তাদের পিতার সাথে হাটে-মাঠে-ঘাটে ঘুরে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসা বাণিজ্য শিখেছেন। আজ তার পিতার অবর্তমানে তারা যখন ব্যবসায়ীক গ্রুপটির হাল ধরেছেন, ঠিক তখনি কুচক্রীমহলটি তাদের হীন স্বার্থ চারিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে।
তাদের ষড়যন্ত্রের একটি নমুনা উল্লেখ করতে চাই। একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল এর শেয়ার বা মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে। এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মরহুম জয়নুল হক সিকদারের প্রাণের এই প্রতিষ্ঠান দেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ যা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ দেশে বিভিন্ন দুর্যোগে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধমে বিশাল অবদান রেখে এসেছে। এটি দেশের প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারির একটি আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে সুপরিচিত। কাজেই সিকদার মেডিকেল কলেজর মালিকানা হস্তান্তর করার প্রশ্নই আসে না।
সিকদার গ্রুপের ব্যবসায়ীক ঋণের যে তথ্য সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে তা সিকদার গ্রুপের প্রতিপক্ষকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড ঋণ এর ভিত্তিহীন তথ্য একত্রে পরিবেশন করে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। জয়নুল হক সিকদারের ‘সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ সহ রিক সিকদার ও রন সিকদারের এর পরিচালিত প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যে ঋণের বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা ব্যাংকিং নিয়মনীতি মেনে কমপক্ষে দেড়গুণ জামানতের বিপরীতে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে সিকদার গ্রুপের ব্যবসায়িক সর্বমোট ঋণের বিপরীতে ব্যবসায়ীক সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক গুণের বেশি। ক্রমাগত মিডিয়া ট্রায়াল এবং কুচক্রিমহলের অপপ্রচার আমাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়ীক কার্যক্রমকে প্রতিনিয়তই বাধাগ্রস্ত করে যাচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ডের বিষয়ে যে তথ্যের অবতারণা করা হয়েছে তাও সঠিক নয়। রিক সিকদার ও রন সিকদারের কোটার অনুকূলে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডসমূহ ট্রাভেল কোটার বিপরীতে ইস্যুকৃত নয়, এগুলো তাদের ব্যক্তিগত ফরেন কারেন্সি একাউন্টের বিপরীতে ইস্যু করা হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে তাদের যাবতীয় দেনা-পাওণা সুদসহ তাদের বৈদেশিক আয় থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় গত তিন বছর আগেই যথাযথ ব্যাংকিং নিয়মের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে মিডিয়া ট্রায়াল না করে আইনকে নিজস্বভাবে পরিচালিত করার জন্য আমরা সকলের কাছে সহযোগীতা চাই।
প্রতিবেদনগুলোতে ন্যাশনাল ব্যাংক লি. এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। কারণ, বৈধভাবে অর্থ প্রেরণের একমাত্র মাধ্যম ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন। যে কোন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে পাঠাতে হয়। ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ চয়নের মাধ্যমে প্রতিবেদনে নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রমনের উদ্দেশ্যে এধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
ন্যাশনাল ব্যাংক লি. এর বোর্ড গঠন নিয়ে প্রতিবেদনে যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। বোর্ড গঠন, পুনর্গঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সিকদার গ্রুপ ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক পরিচালনায় নতুন বোর্ড এসেছে, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব জয়নুল হক সিকদারের আদর্শে উজ্জীবিত তাঁদের পরিবারের সদস্যগন তাদের মায়ের নেতৃত্বে গ্রুপের উন্নয়নে সর্বদা একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। এরকম অপপ্রচারের বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আমরা মনে করি, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সরকার বিরোধী একটি পক্ষ, সরকারের স্বপক্ষের লোকজনকে জাতির সামনে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করে বিরোধীদের হীন বিবেককে জাগ্রত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
সিকদার গ্রুপ সর্ম্পকে অসথ্য তথ্য পরিবেশন করে জনমনে একটি ভুল ধারা তৈরীর চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের মনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দুর করার জন্য আমরা সকলের সহযোগীতে কামনা করছি। সিকদার গ্রুপের পক্ষ থেকে দেয়া এই ব্যাখ্যাটি প্রচার করার জন্য দেশের সকল দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যমের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।