রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আবাসন প্রকল্পে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, সংসদ-সদস্যদের প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে সংস্থাটি। গত ২৫ এপ্রিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জারি করা ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ) বিধিমালা-২০২৪-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (ল্যান্ড অ্যালোটমেন্ট) রুলস, ১৯৬৯’ ছিল। যেটি বাতিল করে নতুন বিধিমালা জারি করা হয়েছে।
এ বিধিমালা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের সরাসরি সদস্য এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে বা কর্র্তৃপক্ষের আইন প্রণয়নবিষয়ক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ব্যক্তিদেরও প্লট বরাদ্দ দিতে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো পেশাজীবী যিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত না থেকেও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনসেবা বা জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বা করেছেন বা এমন কোনো ব্যক্তি যিনি জনগণ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন বা নিবেদিত প্রাণ কোনো সমাজকর্মী বা সমাজসেবক তাকে রাজউক প্লট দিতে পারবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, সংসদ-সদস্য, বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, সরকারি কর্মচারি, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী (নিবাসী), সাংবাদিক, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বেসরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী, আইন ও আইনগত দলিলাদি নিরীক্ষা কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক, মূল অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক আবাসিক প্লট সংরক্ষণ করা যাবে। কর্র্তৃপক্ষের আওতাধীন যেকোনো প্রকল্পের আবাসিক প্লটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ এবং কর্র্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা যাবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, রাজউক উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত কোনো প্রকল্পের ভূমি বা কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানে চিহ্নিত ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে। প্লট বরাদ্দ দিতে জনসাধারণের কাছে আবেদন আহ্বান করে কমপক্ষে দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং কর্র্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। প্লটের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। কোনো ব্যক্তি যদি নিজ নামে বা তার স্ত্রী বা স্বামীর নামে ইতিপূর্বে কর্র্তৃপক্ষের কোনো ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তাহলে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন করার অযোগ্য হবে না। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে কোনো আবেদন দাখিল করলে আবেদন বাতিল করতে হবে এবং তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে।
বিধিমালায় ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজউক কোনো আবাসিক প্রকল্পে অধিকসংখ্যক জনগণের আবাসন ব্যবস্থা করতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যম ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এক বা একাধিক এলাকা বা ব্লক আকারে ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করতে পারবে। কর্র্তৃপক্ষের যেকোনো প্রকল্পে নির্মিত ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যার ১০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের জন্য, ৩ শতাংশ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য, ৩ শতাংশ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য এবং ২ শতাংশ কর্র্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ মূল্য কিস্তিতে পরিশোধের পর অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ মূল্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে পরবর্তী ১৫ বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, রাজউক নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত এলাকায় কোনো আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণ করে সাশ্রয়ী ভাড়া বা মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে পারবে।