সরকারি চাকরি মানেই হচ্ছে জণগণের সেবক। তারাই যখন সাধারণ মানুষদের হয়রানি করে তখন মানুষ হয়ে যায় এক কথায় অসহায়। এমনটাই হয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এনওসিএস বনশ্রী ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকসেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বুড়িগঙ্গা রিয়েল এসেস্টের মালিক আলমগীর হোসেন কাছে এই প্রকৌশলী তিন লাখ টাকা ঘুষ চায়। এইজন্য প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগের চিঠি দেন বুড়িগঙ্গা রিয়েল এসেস্টের মালিক। তবে একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যে ডিভিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অপরাধীদের দিয়েই তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনা আড়াল করতে সুকৌশলে এমন কমিটি গঠন করেছে ডিপিডিসির পরিচালক অপারেশন কিউ এম শফিকুল ইসলাম।
সম্প্রতি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের চাপে দীর্ঘ ১৫ দিন পর গত ৩০ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠনের তালিকা প্রকাশ করেন সংস্থাটি। কিন্তু তার স্বাক্ষর করা আদেশে ‘ব্যাক ডেট’ তারিখ দেখানো হয়েছে। কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- মো, রুহুল আমিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, এনওসিএস বাসাবো, মো. আতাউর কবির প্রমানিক, সহকারি প্রকৌশলী বনশ্রী এবং মুনিম ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী মিটারিং সেন্ট্রাল। কমিটির সকল সদস্যরাই বনশ্রী ডিভিশনের আওতায়। তাদের তদন্তে কতটুকু সত্য তথ্য মিলবে তা এখন দেখার অপেক্ষায়। পূর্বের তদন্ত লক্ষ্য করলে এই তদন্তের ফলাফল হবে শূন্য।
এনওসিএস বনশ্রী ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকসেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ায় ডিপিডিসির এমডির বরাবরে গত ১৫ এপ্রিল অভিযোগ করেন বুড়িগঙ্গা রিয়েল এসেস্টের মালিক আলমগীর হোসেন।
এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘শীতল প্রোপ্রাটি’তে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনাটি ধামাচাপা দিলেও এবার মুকসেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ।
বুড়িগঙ্গা রিয়েল এসেস্টের করা অভিযোগে বলা হয়, এনওসিএস বনশ্রী ডিভিশনের আওতাধীন আলমগীর হোসেনের ৩টি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বনশ্রী ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকসেদুল ইসলাম ওই তিনটি ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ঠিকাদারি কাজ চায়। মালিক আলমগীর দিতে রাজি না হওয়ায় মুকসেদুল নোয়াপাড়া ১১৮/১ মেরাদিয়া খিলগাঁও নির্মাণাধীন ওই ভবনে ট্রাস্কফোর্স নিয়ে হানা দেয়। ঘটনাস্থলে মালিককে না পেয়ে ফোন দেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। মুঠোফোনে মুকসেদুল অভিযোগ করেন আপনার এই ভবনের মিটার অকেজো আমাকে নগদ তিন লাখ টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হবে। না দিলে ট্রস্কফোর্স দিয়ে আপনার মিটারে পেনাল বিল করা হবে। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে ট্রস্কফোর্সের মাধ্যমে ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা পেনাল বিল করে দেন। মুকসেদুল ইসলাম চাকরির শুরু থেকেই বনশ্রী ডিভিশনের কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়া তিনি এবং ওই ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে সুকৌশলে বনশ্রী ফরাজী মেডিকেল হাসপাতালে পোল মাউন্টেড সংযোগ দিয়েছে বনশ্রী ডিভিশন। হাসপাতালে অতিরিক্তি লোড চেয়ে করা আবেদনে সংযোগ প্রদান অনুমোদনে স্বাক্ষর করেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান, মুকসেদুল ইসলামসহ কয়েকজন। অর্থের কাছে ডিপিডিসির সকল অনিয়ম যেন নিয়মে পরিনত হয়।
এদিকে, ‘পোল মাউন্টেড’ ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে জয়নাল আবেদীনের করা আবেদনে উল্লেখ করেন, তার বাসায় বহুদিন আগে থেকেই ২টি আলাদা সার্ভিস তারের মাধ্যমে ৬৪ কিলোওয়াট লোডের অনুমোদন রয়েছে। বাসায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বনশ্রী ডিভিশন থেকে ওভারলোড নিরসনে চিঠি দেয়।
লোড নিরসনের সুযোগ না থাকায় গত বছরের অক্টোবর মাসে তার বাসার সংযোগ বিছিন্ন করে তার কেটে নিয়ে আসে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। পরে জয়নাল আবেদীন স্ট্যাম্পের অঙ্গীকার নামা দিয়ে কয়েকদিনের সময় নিয়ে সংযোগ ফি ১ হাজার ৮৪০ ব্যাংকে জমা দিয়ে পূনঃসংযোগ গ্রহন করেন। তিনি তার আবেদনে আরও উল্লেখ করেন বাসা পূর্বের নির্মাণ হওয়ায় ট্রান্সফরমার স্থাপনের জায়গা নাই। তিনি আর্থিক সংকটের কথাও জানান। পোল মাউন্টেডের মাধ্যমে ১২০ কিলোওয়াট লোডের এইচটি সংযোগের জন্য গত বছরের ২১ নভেম্বর আবেদন করেন। জয়নালের সাথে ৬ লাখ টাকা কন্ট্রাক হয়েছিল। এছাড়া ৫৩৩ নন্দিপাড়া, মাইনুদ্দিন মিয়ার পৌনে সাত কাঠা জমির উপর ১০তলা ভবনে একটি মাদার মিটারসহ মোট ২৯টি মিটারের বিপরিতে উচ্চচাপ উপযোগী (এইচটি সংযোগ) ভবনটি। সেখানে ৬ লাখ টাকা রফাদফায় নিন্মচাপ (এলটি) সংযোগ দিয়েছে বনশ্রী ডিভিশনের অসাধু কর্মকর্তারা। বাড়ি নং-৩৮,রোড নং ৪, ব্লক-ডি বনশ্রী। এই বাড়িটি ৫ কাঠা জমির উপর ৯তলা। এইচটি সংযোগের বিপরীতে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে এলটি সংযোগ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত কাজী রাশেদ, নির্বাহী প্রকৌশরী এবং সহকারি প্রকৌশলী ইলিয়াস। তাদের এই কাজের যোগানদাতা মুকসেদুল ইসলাম।
জোসনা রাণী বাড়ি নং-২৬৪/এইচ মেরাদিয়া নবীনবাগ। ‘ডেভেলপমেন্ট শহিদুল্লাহ’। রাণীর ৭ কাঠা জমির উপর ৯তলা ভবন নির্মাণ করেন ‘ডেভেলপার শহীদুল্লাহ’। একই ভবনে দুই ধরনের সংযোগ। এক পাশে উচ্চ চাপ (এইচটি) আরেক পাশে নিন্মচাপ (এলটি)।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে বনশ্রী ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকসেদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মাউন্টেড সংযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ভোরের পাতাকে বলেন, ‘এ ধরণের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তাদের সংযোগ দেয়ার ক্ষমতা নেই। তাহলে তারা কিভাবে দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এমন অবৈধ সংযোগ দেওয়া হলে বিছিন্ন করা হবে।’ এ বিষয়ে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।