প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস থাকে না তারা কখনো কোনো রণাঙ্গণে বিজয় অর্জন করতে পারে না।
রোববার (৫ মে) সকালে ঢাকা সেনানিবাসে নবনির্মিত আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (এএফআইপি) ভবন এবং আর্মি সেন্ট্রাল অডিটরিয়াম-সেনাপ্রাঙ্গণের উদ্বোধনে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী আজকে জনগণের পাশে দাঁড়ায়, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে সেনাবাহিনীর ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস সাধারণ মানুষ কিন্তু হারিয়ে ফেলেছিল।
শেখ হাসিনা জানান, তার প্রচেষ্টা ছিল আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর যেন সাধারণ মানুষের একটা আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়। যেটা যেকোন সেনাবাহিনীর জন্য একান্তভাবে জরুরি। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন দুঃসময় দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে আছে এবং জনগণের একটা ভরসাস্থল হিসেবে সেই আস্থা আজকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে অবদান রাখে প্রতিটি দেশ, প্রত্যেকেই ভূয়সী প্রশংসা করে। সেটাকে আরও উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য।
সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন তারই ভিত্তিতে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ফোর্সেস গোল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা চাচ্ছি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক জ্ঞানসম্পন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই সাথে যেহেতু ২০০৮ এর নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, কাজেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অন্যান্য সেক্টরের উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গড়ে তুলেছে অত্যন্ত আধুনিক, দক্ষ ও সময়োপযোগী বাহিনী হিসেবে। ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় বসবাসকারীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজির জন্য এ নতুন ভবনের নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আর্মি সেন্ট্রাল অডিটরিয়াম-সেনাপ্রাঙ্গণ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে এএফআইপি ভবনে প্রবেশ করেন এবং নতুন ভবনে স্থাপিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করেন। এসময় এএফআইপি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল ডা. নিশাত জুবাইদা নতুন ভবনের মূল বৈশিষ্ট্য ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন।
২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্যাথলজি সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ‘সশস্ত্র বাহিনী ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ের আগে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
১৪ তলা এএফআইপি ভবনটি আধুনিক পরীক্ষাগারে সজ্জিত, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের অনুক্রম, স্বয়ংক্রিয় রোগজীবাণু শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ এবং মাল্টি-হেডেড মাইক্রোস্কোপ ইনস্টল করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রাঙ্গণের ভবন উদ্বোধন করেন। সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন গুরুত্বপূর্ণ সভা, সেমিনার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্মিত হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।