দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দিতে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যৌথভাবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল (SSH)ও নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মেডিকেল অফিসারসহ প্রথম নিয়োগটিই আটকে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ডা. আতিকুর রহমান এবং প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। এমনটাই অভিযোগ করেছেন লিখিত, কম্পিউটার টেস্ট এবং ভাইবা পরীক্ষায় উর্ত্তীণরা। যদিও প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল সরাসরি এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার স্বারক নাম্বার: বিএসএমএমইউ/২০২৩/৯২৯৩ এর অধীনে ৫২ টি পদের বিপরীতে ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে ভুল বুঝিয়ে শুধু মেডিকেল অফিসার পদে ৬০ জনের নিয়োগ বাতিলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ডা. আতিকুর রহমান এবং প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান। নিজেদের পছন্দের অনেক প্রার্থীকে এ্যাডহক বা সাময়িক নিয়োগ দেয়ার জন্যই একটি জন্মদিনের ছবিকে কেন্দ্র করে তারা বর্তমান উপচার্যকে শুধু মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিডনি কেলেংকারিতে বারবার নাম আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অলৌকিক অভিযোগ আনেন। যদিও বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানে প্রতিনিধি হিসাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদেরও রাখা হয়। সে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশের জন্য সুপারিশও করেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব গর্ভনেন্সেও উঠে। সেখানেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা করার তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে বারবার ভুল বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ডা. আতিকুর রহমান এবং প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান।
উল্লেখ্য, মেডিকেল অফিসার পদে ৬০ জনের বিপরীতে ৩২৩ জনকে লিখিত পরীক্ষীয় পাস করানো হয় এবং কম্পিউটার এবং ভাইভার পর ১৯২ জনকে টিকানো হয়। তবে তাদের নিয়োগ পরীক্ষার ফাইনাল ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না।
নিয়োগের বিষয়টা স্থগিতাদেশ চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করলেও সেটিও বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন ভোরের পাতাকে বলেন, আমি বিষয়টা আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। অবশ্যই বিষয়টা নিয়ে বিএসএমএমইউ’র উপচার্যের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি তিনদিন আগে তাকে বিষয়বস্তু উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার প্রতিউত্তর দেননি।
বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ডা. আতিকুর রহমানকে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগ পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করে প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল ভোরের পাতাকে বলেন, নিয়োগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিষয়। এখানে আমার অনীহা বা ষড়যন্ত্রের কোনো সুযোগই নেই। আমিও চাই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হোক। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ দুপুর ২ টা ৫ থেকে ২ টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত কন্ট্রোলার রুমের সিসি টিভির ফুটেজে বেশ কিছু অসংগতি দেখা গেছে। বিষয়টা নিয়ে দায়সারা তদন্তও করা হয়েছিল। সেখানে বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রভাবও বিস্তার করেছিলেন। তাই নতুন উপাচার্য আসার পর নতুন করে বিষয়টা সামনে এসেছে। আগামী সোমবার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নি বডির বৈঠকেই তদন্ত কমিটি, প্রমাণাদিসহ আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নিজের বিরুদ্ধে কিডনি কেলেংকারির বিষয়টিও মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেন ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সেবক নিউজ হয়েছিল, সেগুলোরর একটিরও সত্যতা মিলেনি। বাংলাদেশ থেকে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র ছিল এটি। ওই ঘটনার পর এদেশে দুই বছর কোনো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়নি। এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে প্রতিদিন সফলভাবে দুইটা কিডনি ট্রান্সপ্লানটেশন করা সম্ভব হচ্ছে। স্পেশালাইজ হাসপাতাল পুরোদমে চালু হলে আরো ৫ টি করা সম্ভব। যা প্রতিবেশি অনেক দেশের তুলনায় বেশি।