"নাম /ঠিকানা বিভ্রাট এর কারণে এখনো শত-শত বাংলাদেশি মানুষ মিয়ানমারে জেলে বন্দী রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা খুবই জটিল হয়ে গেছে। তার পরেও তাদের সহসাই আনার প্রচেষ্টা চলছে"।
বুধবার দুপুরের দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া বিআইডব্লিউটিএ এর ঘাটে মিয়ানমারের কারাগার থেকে ১৭৩ বাংলাদেশী ফেরত আনার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ, কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
এসময় তিনি আরও বলেন, যারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন এবং তাদের স্বজনদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শনাক্ত করা আরও ৪শ জন বাংলাদেশি নাগরিক মিয়ানমারে রয়েছে, আর শনাক্ত না করা শত-শত লোক মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, আন্দামান, মালয়েশিয়া কাশ্মীরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে রয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য যারা আজ ফেরত এসেছে স্বজনরা তাদের পেয়ে অনেক ব্যাকুল হয়ে গেছে। তাঁরা মনে করেছিল তাদের সন্তানরা বেঁচে নেই। আজকে আমার প্রস্তাবে প্রত্যাবর্তন এর কাজটি অনেক এগিয়ে গেছে। যেটা আমি তথা সরকারের প্রচেষ্টায় আজকে ১৭৩ জন ফেরত আনা তাঁর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আজ তাদেরকে পেয়ে স্বজনরা খুবই আবেগে আপ্লুত। এছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থানরত মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যদেরকেও আগামীকাল বৃহস্পতিবার হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে"।
এদিকে মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছে। এর আগে গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘নেভাল শিপ চিন ডুইন' জাহাজ থেকে এসব বাংলাদেশীদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর ১ টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১ টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছার পর পরই ঘাট থেকে গাড়ি যোগে রওয়ানা হয়েছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। যেখানে বিজিবির অধিনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে বৃহস্পতিবার ফেরত নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে প্রতিনিধি দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফেরত আসাদের বিজিবি গ্রহণ করে পুলিশকে হস্তান্তর করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সফররত 'মিয়ানমার নেভাল শিপ চিন ডুইন'১৭৩ বাংলাদেশীদের বহন করে মঙ্গলবারই যাত্রা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে বলে জানাগেছে।
মুলত এসব বাংলাদেশীদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটি বৃহস্পতিবার সকালেই বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবেন। মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্যই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ এবং সংশ্লিষ্টরা কথা বলতেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশীদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেসব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।