#সবুজের ভারসাম্য আনা না হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে #মহাসাগরগুলো বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে #পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে গোটা পৃথিবীতেই। মাশুল গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। প্রচণ্ড উত্তাপে মাটি উগড়ে দিচ্ছে তার বুকে ধরে রাখা নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর সাগর-মহাসাগরগুলো নিজের উদর পূর্তি করছে উষ্ণতায়। জাপানের হিরোশিমাতে যে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তেমন পাঁচ থেকে ছয়টি বোমার সমান তাপ সমুদ্র প্রতিদিন ধারণ করছে। এতে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি সমুদ্র প্রসারিতও হচ্ছে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মহাসাগরগুলো বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। সমুদ্রের দ্রুত উষ্ণতা চরম আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে তীব্র করে তুলছে। বৃষ্টি, খরা ও বন্যার মতো বিষয়গুলোর চক্র ভেঙে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বায়ুমণ্ডল গ্রীনহাউস গ্যাসে ভরপুর হয়ে উঠছে। আর এ কারণে তাপমাত্রাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। তারা বলছেন, যতদিন বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বাড়বে, ততদিন বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগর উভয়ই উষ্ণ হতে থাকবে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে পারলে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হবে। খুব দেরি হওয়ার আগে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাটি উগড়ে দিচ্ছে ব্যাকটেরিয়া: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এ কারণে মাটিতেও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ছে। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সিস্টেম সায়েন্সের গবেষকরা এ বিষয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাদের গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাটির উষ্ণতা বাড়ছে। এতে সক্রিয় জীবাণুর উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে মাটিতে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কীভাবে বৈশ্বিক কার্বন চক্র ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
মাটির উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। শুধু তা-ই নয়, উষ্ণতার কারণে বিভিন্ন সুপ্ত ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস রিখটার বলেন, মাটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জৈব কার্বনের আধার। বিভিন্ন অণুজীব নীরবে বিশ্বব্যাপী কার্বন চক্রকে প্রভাবিত করে। জৈব পদার্থ ভেঙে কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অণুজীবগুলো বেশি সক্রিয় হয়। এর ফলে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
২০১৯ সাল থেকে চলা এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আইসল্যান্ডের একটি সাব আর্কটিক তৃণভূমি পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাটির তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাটির তাপমাত্রা। মাটিতে সক্রিয় ব্যাকটেরিয়া বাড়ার কারণে ভবিষ্যতে ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে কীভাবে ফসল মানিয়ে নেবে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
উষ্ণতায় উদর পূর্তি করছে সাগর: সাধারণভাবে সাগর-মহাসাগরগুলো নিয়মিত তাপ শোষণ করে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য এই তাপ শোষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন গবেষণা বলছে, পাঁচ বছর ধরে সমুদ্রের উষ্ণতা ধরে রাখার ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিষয়টিকে বিশ্বের জলবায়ুর ইতিহাসে একটি উদ্বেগজনক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। চীনের বেইজিংয়ের চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব অ্যাটমোস্ফেরিক ফিজিকসের বার্ষিক বিশ্লেষণে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ৫টি দেশের ১৯টি সংস্থার ৩৪ জন বিজ্ঞানী সম্মিলিতভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করেন।
২০১৯ সাল থেকে মহাসাগরগুলো রেকর্ড হারে উষ্ণ হচ্ছে। এ বিষয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষণা দলের প্রধান চেং লিজিং বলেন, এমন ঘটনার জন্য মানুষই বেশি দায়ী। বিভিন্ন কারণে গ্রীনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল গ্রীনহাউস গ্যাসের মাত্রা বেশি থাকবে, ততক্ষণ মহাসাগরগুলো শক্তি শোষণ করতে থাকবে। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনা চলতেই থাকবে।
তথ্যমতে, ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর (২০২৩ সাল) সমুদ্রের প্রথম ২ হাজার মিটার এলাকায় সঞ্চিত তাপ ১৫ জেটাজুল (শক্তি পরিমাপের একক) বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই মাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ জেটাজুল। জাপানের হিরোশিমাতে যে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তেমন পাঁচ থেকে ছয়টি বোমার সমান তাপ সমুদ্র প্রতিদিন ধারণ করছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে লিভারপুলের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের সমুদ্রবিজ্ঞানী স্বেতলানা জেভরেজেভা বলেন, এই প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক। সাগরের উষ্ণায়নের রেকর্ড টানা পঞ্চম বছর ভেঙেছে। সমুদ্রের তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি ও উষ্ণতার কারণে সমুদ্র প্রসারিত হচ্ছে। সমুদ্রের দ্রুত উষ্ণতা চরম আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে তীব্র করে তুলছে। মহাসাগরগুলো বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বৃষ্টি, খরা ও বন্যার মতো বিষয়গুলোর চক্র ভেঙে যাচ্ছে।
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক পরিবেশবিদ উইলিয়াম চেউং বলেন, সমুদ্রের উষ্ণতা সামুদ্রিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে। উষ্ণ মহাসাগর সামুদ্রিক নানা প্রজাতির প্রাণীর প্রজনন ও পরিযায়ী চক্রকে পরিবর্তন করছে। ফলে বিভিন্ন প্রাণীর আকারেও প্রভাব ফেলছে।
নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা হুলবে বলেন, যতদিন বায়ুমণ্ডল গ্রীনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বাড়বে, ততদিন বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগর উভয়ই উষ্ণ হতে থাকবে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে পারলে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হবে। খুব দেরি হওয়ার আগে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা: বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে দাবদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হয়েই চলেছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল আগের ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয়েছিল বাংলাদেশে এবং ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি। যদিও এক সাথে অনেকগুলো জায়গায় ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে এবার। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং পাবনার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া খুলনা বিভাগের বাকি অংশ, রাজশাহী জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দেশের বাকি অংশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরেই থাকছে। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা এবং যশোরে অধিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় গত সোমবার জানিয়েছেন, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনজীবনের অস্বস্তি বাড়তে পারে। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রথমবার তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। মূলত ১৯ এপ্রিল থেকে এ ধরনের উচ্চ তাপমাত্রা অর্থাৎ দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে, যার ফলে দেশজুড়ে জনজীবনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। আর তার ফলে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা আছে তাদের মধ্যে।
দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ: বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সেই সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তাপমাত্রার এমন বৈরী আচরণের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুযায়ী শুধু ঢাকাতেই বছরে অসহনীয় গরম দিনের সংখ্যা গত ছয় দশকে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এই গরম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বলছে- গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটারের সমআয়তনের জলাধার ও ১০ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ সবুজ কমে গেছে।
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আদিল খান এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা শুধু ঢাকার চিত্র নয়। এখন জেলা উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন উঠেই চলেছে। নগরগুলোর প্রতিটি ভবন পরিকল্পিত না হলে এবং এলাকাগুলোতে সবুজের ভারসাম্য আনা না হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ কিভাবে সম্ভব: আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, তাপমাত্রা ক্রমশঃ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, যার জন্য উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বৈশ্বিক কারণ ছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং পরিবেশের অযৌক্তিক ক্ষতি করাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এখন ভবনগুলোর ডিজাইনই হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রেখে কিংবা শীতাতপ যন্ত্র যাতে বসানো যায় সে চিন্তা করে। অথচ আগে অনেক ভবন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে গরমকালে শুধু ফ্যানেই কাজ হতো।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে মেট্রোরেলের মতো বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করতেই হবে। খাল, পুকুর-সব ভরাট হয়ে গেছে। জলাধার নেই। এগুলোই তো সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমাতে দরকার।
তবে, নগরায়ণের পাশাপাশি শহরগুলোকে কীভাবে আরো বেশি পরিবেশবান্ধব করা যায়, সে পরিকল্পনার ওপর জোর দেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হওয়ার সাথে সাথে নগরায়ন বাড়বে। কিন্তু শহরগুলোকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে, গ্রিনারি বা সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। শহরগুলোর জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের সুবিধাগুলোকে শহরের বাইরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে জনসংখ্যায় ঘনত্ব কমাতে হবে। পাশাপাশি ভবনগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে।
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ খান বলছেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কংক্রিটের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বনায়ন করতেই হবে। বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে সেটা হলো ধ্বংসাত্মক নগরায়ণ। ঢাকার এমন ওয়ার্ড আছে যেখানে ৯০ ভাগই কংক্রিট। গরম বেশী অনুভূত হয়, কারণ নগর এলাকায় গাছপালা, জলাধার ধ্বংস করা হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত ওপেন স্পেস রাখতেই হবে। নগরায়ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে সবুজের পরিমাণ বাড়িয়ে নগরের ২৫-৩০ ভাগ সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ভবনগুলোর চারদিকে স্পেস বা খালি জায়গা রাখতে হবে এবং এলাকাভিত্তিক পুকুর বা জলাধার রাখতে পারলে তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।