৮০ দশকের তুমুল জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলো নানা কারণেই হারিয়ে গেছে। সেই সময়ে নরসিংদীর রায়পুরার ‘ছন্দা’ সিনেমা হলটিও ছিল জনপ্রিয়। দর্শকদের হল বিমুখতাসহ নানা কারণে এ ব্যবসায় নেমেছে ধস। তাই সিনেমা হলটি বিক্রি করা হয়েছে। এটি ক্রয় করেছেন পাশের এতিমখানা মাদ্রাসা।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে হল এলাকার রাস্তার পাশে একটি ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ছন্দা সিনেমা হলটি মাদ্রাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সাদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। প্রচারে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলটির সামনে ঝুলছে ছোট বড় আকারের ‘রাজকুমার’ ছবির পোস্টার। ভেতরে শো চলছে। পরবর্তী শো-দেখতে হলটির সামনে কিছু দর্শক অপেক্ষাও করছেন।
মাদ্রাসার জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসাইন জানান, ইদরিসিয়া দারুল কোরআন মাদ্রাসার কাছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ জন্য ২০ লাখ টাকা বায়নাও করা হয়েছে। সিনেমা হলটি ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হবে একটি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সিনেমা হল মালিকপক্ষ বলছে, করোনার পর থেকে নানা কারণে সিনেমা হলে দর্শকের উপস্থিতি কমেছে। ব্যবসায় নেমেছে ধস। ইতিমধ্যে হলটি বায়না দলিলে বিক্রির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল মিয়া, আমির হোসেন, ওয়াহিদ মিয়া, জয়নাল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আগে হলটি ভালোই চলতো। ৫-৭ বছর ধরে নানা কারণে আগের মতো আর চলে না। মাদ্রাসা-এতিমখানা ঘেঁষে সিনেমা হল। এখানে নাচ গানের আওয়াজ আসে। মাদ্রাসার জায়গাও কম।
গত কয়েক বছর ধরে হলটি ভাড়ায় চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুলতান মিয়া। তিনি বলেন, আসল মালিক সামসুল ইসলাম মানিকের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি। ৪ শ টাকা হাজিরায় চারজন কর্মচারী নিয়ে পরিচালনা করে আসছি। করোনার পর থেকে দীর্ঘদিন লোকসান গুনে গুনে এত দিন হল চালাচ্ছি। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ। ফিল্মের জগৎ আগে ছিল টাটকা টাকা, এখন আর নাই।
ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা মো. মোকাররম হোসাইন বলেন, জানতে পারি মালিকপক্ষ হলটি বিক্রি করে দেবে। স্থানীয়রা চিন্তা করে হলটি মাদ্রাসার জন্য ক্রয় করার পরিকল্পনা নেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ধরে, ২০ লাখ টাকায় বায়না দলিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ লাখ টাকা জমা পরেছে। সকলের সহযোগী নিয়ে মাদ্রাসাটির নামে ওই স্থাবর সম্পত্তি ৩৩ শতক জমি ওকফ দলিল করা হবে। আশা করি স্থানীয় ও বিত্তবান সকলের সহযোগিতায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে ইনশাল্লাহ।