মেয়েটা নিজেই ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এখন উল্টো ধর্ষকের দায়ের করা মামলায় জেলে আছে। বরগুনার তলাতলী উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষক নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড.কামরুজ্জামান বাচ্চু তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ওই নারীর নানার এমন অভিযোগ। তবে বিষয়টি নিয়ে ধর্ষিতার পরিবার যেন কোনো আইনী ব্যবস্থা না নেয়, সেজন্য তাদের অর্থের প্রলোভন দেখানোর পাশাপাশি, কথা না শুনলে জীবননাশের হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে, ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার নিজেকে বাঁচাতে নানা অপতৎপরতা শুরু করেছেন। এমনকি পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি নানাভাবে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌফিকউজ্জামান ফাঁসাতে উঠেপরে লেগেছেন।
উল্লেখ্য, ধর্ষিতা ওই নারীর সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবিরের একটি অশ্লীল ভিডিও ভোরের পাতার হাতে এসেছে। এখন এ ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচতে অন্যদের পর দোষ চাপাতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকউজ্জামানকে হয়রানি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি তার ব্যবহৃত একটি ফোনও নিয়ে ফরেনসিক করতে পাঠিয়ে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার ধর্ষিতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ জোরপূর্বক তাকে দিয়ে তৌফিকউজ্জামানের নাম বলাতে চেষ্টা করে নির্যাতনও করা হয়। কিন্তু আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ধর্ষিতা সরাসরি স্বীকার করেছে, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকউজ্জামানের নাম তিনি শুনেছেন মানুষের কাছে; কিন্তু কখনোই তার সাথে যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকউজ্জামানকে চাপে রাখতেই প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রাজনৈতিক নোংরা খেলায় মেতেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ ধর্ষণের শিকার মামলার আসামী ওই নারী এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছেন।
আদালতের বিচারক তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। গত সোমবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে দেন। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলা পরিষদের নিচতলায় গত শুক্রবার সকালে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়া, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে এক নারীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক পর্যায় তারা ওই নারীকে ধর্ষণ করে। ওই নারী তাদের হাত থেকে রক্ষায় নিজের মোবাইলে আপত্তিকর ছবি ধারন করে। ওই ছবি তিনি স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরের কাছে গচ্ছিত রাখে।
গত বছর ২৮ অক্টোবর ওই ছবি ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াসঅ্যাপে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হন দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পদক। গত ১২ এপ্রিল নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু তার সঙ্গে ওই নারী প্রতারনা করে তার মোবাইলে আপত্তিকর ছবি ধারন করে হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ওই ছবি ছড়িয়ে দেয়। এমন অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান বাদী হয়ে তালতলী থানার পর্নোগ্রাফী আইনে ওই নারীকে প্রধান এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বরগুনা ডিবি পুলিশ আসামী ওই নারী ও তার সহযোগীকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করে।
ওইদিন রাতেই তাদের বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। একই সঙ্গে আদালতে ওই নারী জবানবন্দি দেন। তার জবাব বন্দীতে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। প্রতারনার ফাঁদে ফেলে তারা ওই নারীকে ধর্ষণ করে।
ওই নারী তাদের হাত থেকে রক্ষায় নিজের মোবাইলে আপত্তিকর ছবি ধারন করে রাখে। ওই ছবি তিনি জাহিদুল ইসলাম সবুজ ফকিরের কাছে গচ্ছিত রাখে। এদিকে মামলার বাদী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ওই নারীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় একটি রেষ্টুরেন্টে দেখা করেন। এরপর তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। সখ্যতার সুবাদে তার সঙ্গে ওই নারী পারাবাত লঞ্চে পাশাপাশি দুইটি কেবিনে আসেন এবং বাচ্চুর কেবিনে এনে বলে আমি রাতের খাবার খাইনি। পরে খাবার খেয়ে তার কেবিনে শুইয়ে পরে এবং তাকে ছড়িয়ে ধরে তার (নারী) মোবাইলের গোপন ক্যামেরায় আপত্তিকর ছবি ধারন করেছেন।
অপর দিকে এ মামলার স্বাক্ষী চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও মিঠু তারাও ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে জবানবন্দীতে ওই নারী উল্লেখ করেছেন। সোমবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামী ওই নারী এবং তার সহযোগী জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে দেন।
ওই নারীর নানা অভিযোগ করে বলেন, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিঠু আমার নাতনিকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে। এখন উল্টো তারাই মামলার বাদি ও স্বাক্ষী হয়ে আমার নাতনিকে মিথ্যা পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবী করছি।
মামলার বাদী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সুপার এডিটের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়ার পায়তারা চালায় ওই নারী। যাদের সঙ্গে এমন প্রতারনা করেছে আমরা সবাই মিলে পর্নোগ্রাফি আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
তালতলী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) রনজিৎ কুমার সরদার বলেন, থানায় মামলা হলের বরগুনা ডিবি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
বরগুনা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি বশির আলম বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার আবদুস ছালামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলবেন। তবে মোজাম্মেল হোসেনকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি বিষয়বস্তু উল্লেখ করে তার ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে ক্ষুদেবার্তা / এসএমএস পাঠালেও তিনি সেটির প্রতিউত্তর করেননি। পরবর্তীতে তিনি কলব্যাক করে বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারকে কেউ ভয়ভীতি দেখালে আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়া মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মামলার বিষয়টা আদালতে চলমান, তাই সেটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। সুষ্ঠুভাবেই মামলার তদন্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, আলোচিত এই ধর্ষণকাণ্ডের নেপথ্যে নাটের গুরু হিসাবে সব কলকাঠি নাড়ছেন তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন। তার মদদেই এলকায় জমি দখল থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা ঘটে না। নিজেকে এই ধর্ষণের ঘটনা থেকে আড়াল করতে মামলা করিয়েছেন এবং ওই পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও সেটির প্রতিউত্তর করেননি।