দখল, দূষণে মৃতপ্রায় রাজধানীর চারটি খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কালুনগর, জিরানি, মান্ডা ও শ্যামপুর খালের জন্য ৮৯৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারটি খালের দুই পারে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, বাইসাইকেল লেন, বাচ্চাদের খেলার মাঠ, মাছ ধরার শেড, ফুডকোর্ট ও কফিশপ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নাগরিকসুবিধা ও জনপরিসর বাড়াতে খালগুলোর পাশে গড়ে তোলা হবে পথচারী সেতু, শপিং মল এবং পাবলিক টয়লেট।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল বুঝে নেওয়ার পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) দেয় ডিএসসিসি। প্রকল্প যাচাই কমিটির সুপারিশের আলোকে পরবর্তীকালে ২০২২ সালের অক্টোবর একনেক সভায় পাশের পর নভেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিএসসিসি আওতাধীন খালগুলোর সুষ্ঠু পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করে জলাবদ্ধতা নিরসন, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার মাধ্যমে নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করা।
প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের জানান, ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য আলাদা ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু অংশের এখনো ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন না হলেও প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানান তিনি। খায়রুল বাকের বলেন, চারটি খাল ঘিরে নেওয়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার অন্তত ৫০ লাখ লোক জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে।
যে চার খাল ঘিরে পরিকল্পনা: প্রকল্পভুক্ত খালগুলো হলো কালুনগর, জিরানি, মান্ডা ও শ্যামপুর খাল। এর মধ্যে ডিএসসিসির ১৪ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত কালুনগর খালের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ৫, ৬, ৭৪ এবং ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের জিরানি খালের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৫৮ ও ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামপুর খালের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৭৮ কিরোমিটার এবং ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মান্ডা খালের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার। চার খাল মিলিয়ে মোট ১৯ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার খাল দখলমুক্ত, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করতে প্রকল্পব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি ৭৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
কালুনগর খালের দুই পাশে চারটি পথচারী সেতু, দুইটি পাম্প হাউজ, ১৪৪০ মিটার ওয়াকওয়ে তৈরি, ৯৬টি বৈদ্যুতিক বাতি, ৮০টি বসার বেঞ্চ এবং একটি ফুডকোর্টসহ সবুজায়ন, বাগান নির্মাণ, ওয়েস্টবিন ও অন্যান্য নাগরিকসুবিধা স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
জিরানি খালে ৯ হাজার ৬০০ মিটার ওয়াকওয়ে, দুইটি পাবলিক টয়লেট, ৯ হাজার মিটার বাইসাইকেল লেন, দুইটি ব্যায়াম করার শেড, ১৭ হাজার মিটার সবুজায়নসহ বিভিন্ন নাগরিকসুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
গাড়ি চলাচলের ছয়টি সেতু, ২২টি পথচারী সেতু, পাঁচটি ফুডকোর্ট, চারটি প্লাজা এবং অন্যান্য সব সুবিধা নিশ্চিত করতে মান্ডা খালের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
১৭ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে সবুজায়ন ও ল্যান্ডস্কেপিং, ১৯২টি বৈদ্যুতিক পোল ও নান্দনিক বাতি স্থাপন, ১০০টি ওয়েস্ট বিন ও বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ নির্মাণে শ্যামপুর খালের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৭ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ প্রকল্প সম্পর্কে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা যখন ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিলাম, তখন এগুলোর বেশির ভাগ অংশ দখল ও দূষিত অবস্থায় ছিল। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে খালগুলো দখলমুক্ত করেছি এবং সাধ্যমতো পলি ও বর্জ্য জমে প্রবাহ বন্ধ হওয়া জায়গার পলি অপসারণ করেছি। ঢাকার নাগরিকেরা যাতে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায় এবং একই সঙ্গে নান্দনিক পরিবেশে অবকাশ যাপনের সুযোগ পায় এ লক্ষ্যে আমরা চারটি খালকে ঘিরে প্রকল্পটি গ্রহণ করি।’ সূত্র: ইত্তেফাক