রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম পড়ালেখায় পটু, অর্থ কেলেংকারিতে পটু ঠিক তেমনি মাদক সেবনেও পটু এমন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে তিনি খোদ বনানীর রাজউকের কোয়ার্টারে বসে নিয়মিত মাদকের আসর জমান।
আব্দুল করিম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) থেকে পড়ালেখা শেষ করে ২০১৮ সালের শেষের দিকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসাবে চাকরি নেন রাজউকে। সংযুক্ত রয়েছেন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (গাউক)। তবে বর্তমানে ২৯/১/২০২৪ইং তারিখে স্মারক নম্বরে-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.২৭.০১.২৪.(১৬৮) জানা যায়, এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনির ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক মো. আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানীতে অবস্থিত রাজউকের কোয়ার্টারে রাজউকের কিছু অস্বাদু কর্মচারি-কর্মকর্তার ও বিভিন্ন স্থান হতে আগতরা সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত চলে বিভিন্ন মাদক সেবন। মাদক সেবন গ্রহণকালে মাদকাসক্ত রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম রাজউকের কোয়ার্টারে বসে নিয়মত নিষিদ্ধ ইয়াবাবা, মদ, বিয়ার ও ধূমপান সেবন করেন তার একাধিক ছবি ও ভিডিও রয়েছে ভোরের পাতার কাছে।
বনানীর রাজউকের কোয়ার্টারে রাজউকের কিছু অস্বাদু কর্মচারী-কর্মকর্তার ও বিভিন্ন জনদের মাদক সেবন কার্যকলাপ নিয়ে রাজউকের কর্মচারি-কর্মকর্তা জানলেও তারা লজ্জা ও ভয়ে জিনিসটি কারও সামনে প্রকাশ করে না। ফলে রাজউকের স্বচ্ছ ইমেজধারীরা রয়েছে ইমেজ সংকটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে বলেন, ‘রাজউকের কিছু অস্বাদু কর্মচারী-কর্মকর্তার জন্য রাজউকে চাকরি করি তা বলতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনির ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি ছিলেন বিধায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এর মধ্যে সে রাজউকের কোয়ার্টারে বসে অন্যদের নিয়ে নিয়মিত মাদক সেবন করে যা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। যা খুব লজ্জাজনক। অস্বাদু ও মাদকসেবিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে সবাই সাবধান হবে।’
রাজউকের কোয়ার্টারে বসে ইয়াবা(মাদক) সেবন করা বিষয়ে মো. আব্দুল করিমকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বিষয়বস্তু উল্লেখ করে মেসেজ পাঠালে তিনি এক ঘন্টা পর কথা বলতে চান।
রাজউকের কোয়ার্টারে বসে সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিমের মাদক গ্রহণের বিষয়ে রাজউকের সদস্য (প্রমাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আব্দুল করিম ‘এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনি’র ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক মো. আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আব্দুল করিমক রাজউক কোয়ার্টারে বসে ইয়াবার সেবনের বিষয়টি লজ্জাজনক আমাদের কাছে। তার মতো দুই একজন মানুষের জন্য গোটা রাজউক কলংকৃত হয়ে যায়। এমন জঘন্য কাজের জন্য অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত ।’
বিভিন্ন সূত্রে ও অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, চাকরির মাত্র ৭ বছরেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য (চুক্তি ভিত্তিক), ঠিকাদারদের থেকে ঘুষ-কমিশন বাণিজ্য, ব্যবসায়িক চুক্তি ও অবৈধভাবে লেনদেন করে গড়েছেন নানা সম্পদ। নামে-বেনামে ঢাকাসহ গ্রামের বাড়ি রংপুরে রয়েছে আব্দুল করিমের কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
সরকারের শায়িত্ব শাষিত প্রতিষ্ঠান রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিমের নিয়মিত মাদক গ্রহণের বিষয়ে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ভোরের পাতাকে বলেন, ‘পূর্ব থেকেই রাজউক আর দুর্নীতি একাকার, সমার্থক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। রাজউকের কর্মচারী-কর্মকর্তারা রাজউকের কোয়ার্টারেই বসেই ইয়াবার মতো মাদক সেবন করা একটি অপরাধমূলক কাজ। সরকারি বা শায়িত্বশাষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মরতারা এমন জঘণ্য কাজ করে থাকলে তার যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত। দেশের আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর মাদক উদ্ধার অভিযানে যাওয়া উচিত।’
ভোরের পাতা/আরএস