প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১:০৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ
পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এক প্রার্থীকেপ্রতারণার ফাঁদে ফেলে টর্চার সেলে আটকে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবী ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেঁষা ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড় এলাকার মুন্সিবাড়ীতে গড়ে তোলা টর্চারসেলে ঘটনাটি ঘটেছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে মুকসিদুল গাজী (২৭) নামের এক যুবক আটকে রাখা হয় চালানো হয় শারিরিক নির্যাতন। পরিবারের কাছে প্রথমে ৫ লাখ টাকা পরে ১ লাখ ৫০ হাজার দাবী করা। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাতে গৌরীপুর থানা পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে এবং অন্য তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে মামলা নং ১৭/ তারিখ ২৭/০৩/২০২৪ ইং মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড় গ্রামের মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে মোঃ শাহজাহান মিয়া (৩৭), লক্ষীপুর গ্রামের আঃ খালেকের ছেলে মোঃ সবুজ মিয়া (২৮) ও নান্দাইল উপজেলার শেরপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৪)।
ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী মাকসিদুল গাজী জানান, সাপ্তাহিক চাকরির খবর পত্রিকায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ সংস্থায় চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে জীবনবৃত্তান্ত পাঠাই। গত ২৪ মার্চ আমার মোবাইল নম্বরে কল আসে। শাহজাহান মিয়া নামে একজন জানায়, আমি প্রাথমিকভাবে সেকশন অফিসার হিসেবে সিলেক্ট হয়েছি। যদি চাকরিটি করতে চাই তাহলে ৫ মিনিট পর তাদেরকে চাকরি করার বিষয়টি জানাতে বলে। আমি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে চাকরি করার বিষয়টি নিশ্চিত করি। আমাকে জানানো হয় মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে। সেজন্য আমাকে কিশোরগঞ্জের নান্দাইলে আসতে বলা হয়। তার কথামতো গত ২৫ মার্চ নান্দাইলে আসি। তখন মোঃ শাহজাহান মিয়া ও শফিকুল ইসলাম আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড় মুন্সিবাড়ীতে নিয়ে আসেন। রাতে সেখানে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়ার পরই বুঝতে পারি আমি প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েছি। আমার কাছে তারা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় এবং হাত-পা বেঁধে রাখে। সেখানে তারা আমাকে আটকে রেখে প্রথমে কিডনি খুলে বিক্রি করে দেয়ার হুমকি দেয় এবং মুক্তিপণের টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।
তিনি আরও জানান, একটি অন্ধকার কক্ষে নিয়ে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার জন্য রাতভর নির্যাতন চালায় ও আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। আমার গলায় ছুরি ও মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলে যে পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলি যে আমার চাকরি হয়ে গেছে টাকা দিলে চাকরি নিশ্চিত হবে। বাড়িতে আমার
পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলে। আমার পরিবার একপর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। পরদিন নগদের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ৫ হাজার পাঠায়। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় আমাকে আমার সাথে থাকা মানিব্যাগ, কাপড়চোপড়, আইডি কার্ড রেখে ঢাকার গাড়িতে তুলে দিবে বলে আমাকে মোটরসাইকেল তুলে নিয়ে গলায় ছুরি ধরে প্রতারকচক্রের সদস্য মোঃ শাহাজাহান মিয়া ও মোঃ সবুজ মিয়া রওনা হয়। আজিজুলের মোড়ে মানুষজন দেখে আমি মোটরসাইকেল থেকে লাফ দিয়ে পড়ি। এ সময় মোটরসাইকেলের ফিছনে বসা সবুজ মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যায় আর মোটরসাইকেল চালক মোঃ শাহজাহান মিয়া গাড়ি চাপা পড়ায় স্থানীয় লোকজন ধরে পুলিশে খবর দিলে গৌরীপুর থানার পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় জানান, ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত মোঃ শাহজাহান মিয়া (৩৭)কে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।অন্য প্রতারকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।