শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই: ডিএমপি কমিশনার   ডেঙ্গুতে আরও ১০ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬   ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান: ফখরুল   জ্বালানি খাতে ৩ মাসে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয়: উপদেষ্টা   ছাত্র আন্দোলনে একাই ২৮ রাউন্ড গুলি করা ফরিদ গ্রেপ্তার   তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুতিনের পাশে দাঁড়াবে কারা   হজে অনিয়মের অভিযোগে ২ এজেন্সিকে জরিমানা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
যে ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি ৫০ বছর!
কোন অভিশাপে? কার অপরাধে?
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪, ১০:০১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। পেরিয়ে গেছে মুক্তি সংগৰামের অর্ধশতাব্দী। বাংলাদেশের জন্মের অর্ধশত বছর! এই ৫০বছর পরে এসেও দেশের একটি বড়  একটি জনগোষ্ঠী, যারা ৭১'র পরবর্তী প্রজন্ম, তারা নিজেদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানে না। তাদের জানানো থেকে খুবই সুপরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা বিজয়ের ঘ্রান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে কওমীর সন্তানদেরকে। কওমি মাদরাসার ছাত্রদেরকে জানানো হয়নি মুক্তিযুদ্ধের কথা! মুক্তিযুদ্ধের ধর্মীয় চেতনা ও অনুভূতিকে সুগভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মহীনতায় রূপ দেয়ার হয়েছে। আর এই ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হয়েছে খোদ এদেশের ইতিহাসবিমূখ ইসলামপন্থীরাই।

স্বাধীনতার বিগত ৫০ বছরে খুব পরিকল্পিতভাবে  ইতিহাস বদল হয়েছে এই ফাঁকে । কওমী আলেমদের ৯৫ ভাগ মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে কাজ করেও আজ আলেম বলতেই স্বাধীনতা বিরোধী কেন?

 কোন অভিশাপে?
 কার অপরাধে? এই দায় কার???

৫০বছর পর! 
কওমী পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযুক্তি
_______________________________
দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও কওমী মাদরাসা শিক্ষায় কোমলমতি শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে নেই কোন পাঠ্যসূচী ও তেমন কোন কার্যকরী উদ্যোগ।  যা একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে আমাদের চরমভাবে হতাশ করে।

সেই চেতনাবোধ থেকে ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও দেশপ্রেম নিয়ে লিখিত পাঠ্যবই বিজয়ের ৫০বছর পূর্তিতে আমার উদ্যোগে (সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহর রচনায়) প্রথম কওমী মাদরাসার পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনকে ধারাবাহিক পাঠ্যক্রম ভুক্ত করেছি। লিখেছি সকল শ্রেণির জন্য একাধিক বই ও প্রবন্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে এসে আল্লাহ এই অধম বান্দাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়েছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ভাই আমার বুক চাপ দিয়ে বললেন, "কেবল কওমী মাদরাসায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্য করার জন্য আপনাকে একুশের পদক দেয়া দরকার"।

যা গত ২০২২ সালের শিক্ষাবর্ষে 'সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত ৫শতাধিক কওমী মাদরাসার ১লক্ষ ১১হাজার শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। 

যা কেবল কওমী মাদরাসার ইতিহাসেই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসাবে স্থান করে নিবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।  জাতি হিসেবে আমাদের দূভার্গ্য যে, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের জন্য আমাদেরকে দীর্ঘ ৫০বছর অপেক্ষা করতে হলো।  এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য জাতি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো।  আজ আপনারা ও আমরা এই ঐতিহাসিক একটি মূহুর্তের সাক্ষী হলাম।  আলহামদুলিল্লাহ। 

কেন এই আয়োজন???????????

এই হৃদসম মানচিত্র আমাদের
___________________________
একটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে সমন্তরালভাবে দুটি ভালবাসা নিয়ে বড় হতে থাকে। এক. মা দুই.তার মাতৃভূমি। কৃতিম অকৃতিম লালিত হরেকরকম ভালবাসার ভীরে এদুটি আত্মাজ টান তাকে শিকড়ের উপর মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং যে কোন কারনেই হোক, কোন মানুষের হৃদয়ে যদি দেশের প্রতি মমত্ববোধ  ঘাটতি থাকে তবে সে যুগপৎ শেকড়ছাড়া ও দুর্ভাগা। আমার দেশ, আমার লাল সবুজের পতাকা আমার অহংকার। আমার প্রেমময় মানচিত্র এই হৃদয়সম বাংলাদেশ।। 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব
______________________
আমরা খুবই সৌভাগ্যবান,দেশ মাতৃকার জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার ইতিহাস খুবই তাৎপর্যের, বীরত্বের,  অসীম সাহসিকতা ও সংগ্রামের। আরো সৌভাগ্যের কথা হলো, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার যে সিংহভাগ দামাল মুসলিম ছেলেরা ৯ মাস জীবনবাজী রেখে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছিল তাদের প্রেরণার উৎস ছিলেন এদেশের আলেম উলামা ও পীর মাশায়েখগন।

একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ, সামরিক সেনা, জাতীয় নেতাদের আত্মত্যাগের পাশাপাশি আলেম উলামাদের বড় একটি অংশ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

কিন্তু বুক ফুলিয়ে বিজয়ের উৎসবে আলেমরা তাদের প্রজন্মকে এসব জানাতে পারপন নি। সম্প্রতি সময় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সহ আলেমদের কিছু সংগঠন বিজয় আর স্বাধীনতার উৎসব পালন করছে,এটি আশার কথা। যদি দেশের অধিকাংশ মাদরাসায় এই সচেতনতা নেই। আমরা বিগত কয়েকবছর ধরে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামপর পক্ষ থেকে এই চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

একাত্তরের ভিত্তিমূল ইসলাম
__________________________
মনে রাখতে হবে,৭০এর নির্বাচনই মূলত ছিল ৭১এর চেতনার ভিত্তিমূল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ  জয়লাভ করে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সংবিধান কমিটি ছয় দফা ভিত্তিক যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, তাতে ইসলাম ধর্মকে দেওয়া হয়েছিল আলাদা মর্যাদা।  বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্রে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—

‘ক. ৩য় ভাগ-নির্দেশমূলক রাষ্ট্রীয় মূলনীতি

১. ইসলাম

১. পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আজ্ঞাগুলোর খেলাপি কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না।

২. পাকিস্তানের মুসলমানদের পবিত্র কুরআন ও ইসলামিয়াত শিক্ষার সর্বসুযোগ প্রদান করতে হবে।

৩. পাকিস্তানের মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মগুলো পালনে নৈতিক মান উন্নয়ন সাধন করতে হবে।’

(হাসান হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৭৯৩)

ইসলাম  ও একাত্তরের মেলাবন্ধন!
______________________________
এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে মহান স্বাধীনতার সর্বাধিক শক্তিশালী প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল যে সত্তরের নির্বাচন, তার সঙ্গে ইসলামের বৈরিতা নেই, আছে সুগভীর বন্ধুত্ব। এই মুলনীতির উপর ভালো ভিত্তি করে যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামিলীগ। একাত্তরের আগে টানা দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই বরেণ্য আলেম। তাদের চেতনার স্পীট ছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের সত্তাজুরে।

একাত্তর ও ধর্মহীনতার সংঘাত
________________________
একাত্তর পরবর্তীতে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন চেতনায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। তাদের দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্পিড বা দাবীকে ইতিহাসে আড়াল করা হয়েছে। কিন্তু একাত্তরের নয়মাস ধর্মীনতা ও অর্ধমের বিরোদ্ধে লড়াই করেছিল বীর বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানী এহিয়াখান, টিক্কা কান, ভুট্টো কেউই ধার্মিকতো ছিলই না, এরা ছিল কট্টর ইসলাম বিরোধী পশ্চিমা দালাল।  ফলে পাকিস্তানের মুফতী মাহমুদের মতো শীর্ষ আলেমরা তখন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলান। আড়াল করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে আলেম উলামাদের অবদানের ইতিহাসকেও। ইসলামকে সুপরিকল্পিতভাবে একাত্তরের চেতনার মুখোমুখি দাড় করানোর হীন চেষ্টা করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর চেতনায় যা ছিল
________________________
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একশ্রেণির রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি শাসকদের সুরে বলতে থাকে ‘এটি ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মহীনতা’র লড়াই, যা দেশের সাধারণ মানুষকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের ‘সংশয়’ দূর করে দেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরেই তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমান; আমার বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।’ (আবুল মনসুর আহমদ, আমার-দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, খোশরোজ কিতাব মহল, ২০১০, পৃষ্ঠা ৬০৪)
তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আমি বাঙ্গালি,  আমি মানুষ, আমি মুসলমান।

ইসলাম ও স্বাধীনতার সুহৃদ 
_________________________
ইতিহাস বলে, বাঙালি জাতির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে ইসলাম কখনো অন্তরায় ছিল না; বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম হিসেবে তা অনুপ্রেরণা হিসেবেই কাজ করেছে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ; সর্বত্র বাঙালি মুসলিম তার ধর্ম থেকে অনুপ্রেরণা লাভের চেষ্টা করেছে। বিপরীতে পাকিস্তানি শাসকরা তাদের ধর্মপরায়ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের প্রতিবাদে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, লেবেলসর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হজরত রসুলে করিম (সা.)-এর ইসলাম; যে ইসলাম জগদ্বাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ (বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, নভেল পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ২১)

স্বাধীনতার ঘোষনায় ইসলাম
___________________________
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে বলা হয় স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা। তেজোদীপ্ত সেই ভাষণে তিনি স্বাধীনতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে। তিনি বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা।’ এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে কবি আবদুস সালামের কণ্ঠে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে প্রচারিত ঘোষণাটিও (মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বেসামরিক ঘোষণা) শুরু হয়েছিল ইসলামী রীতিতে ‘নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিয়ালা রাসুলিহীল কারিম’ দিয়ে এবং শেষ হয়েছিল কোরআনের আয়াত ‘নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব’-এর মাধ্যমে। একই দিনে কলকাতা বেতার স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য প্রচারিত হয়। যার পরিসমাপ্তি হয় এভাবে,  ‘May Allah bless you and help in your straggle for freedom. JOY BANGLA.’ অর্থাৎ এই মুক্তিসংগ্রামে আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়া করুন এবং সাহায্য করুন। জয় বাংলা। (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড-৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০১০, পৃষ্ঠা ১১ ও ২৩২)

মুক্তিযুদ্ধের প্রচারণায় ইসলাম
_________________________
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ ‘স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনাবলি’ শিরোনামের একটি প্রচারণা ছিল এমন—“বাঙালির অপরাধ তারা তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততিদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে। বাঙালির অপরাধ আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীতে, আল্লাহর নির্দেশমতো সম্মানের সাথে শান্তিতে সুখে বাস করতে চেয়েছে। বাঙালির অপরাধ মহান স্রষ্টার নির্দেশমতো অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে এক সুন্দর ও সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার সংকল্প ঘোষণা করেছে।... আমাদের সহায় পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য। মনে রাখবেন, আপনার এ সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, সত্যের সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার দুশমন বাঙালি মুসলমান নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা কাউকে হত্যা করতে, বাড়িঘর লুট করতে, জ্বালিয়ে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। মসজিদের মিনারে আজান প্রদানকারী মুয়াজ্জিন, মসজিদে-গৃহে নামাজরত মুসল্লি, দরগাহ-মাজারে আশ্রয়প্রার্থী হানাদারের গুলি থেকে বাঁচেনি। এ সংগ্রাম আমাদের বাঁচার সংগ্রাম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার ওপর বিশ্বাস রেখে ন্যায়ের সংগ্রামে অবিচল থাকুন। ‘অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর’। বিশ্বাস রাখুন : ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।’” (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬-১৮)

৭১র প্রেরনায় ধর্মীয় আবেগ
________________________
এ ছাড়া রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করতে গায়েবানা জানাজা, কোরআন তিলাওয়াত, শহীদদের জন্য প্রার্থনা, অস্থায়ী মসজিদ স্থাপন ও ইমাম নিয়োগের প্রশাসনিক নির্দেশের প্রমাণও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলপত্রে পাওয়া যায়। যেখানে এটাও বলা আছে,  ‘This arrangement is required to boost up the moral of the service-man.’ অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে এসব (ইসলাম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের) আয়োজন যোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়েছিল। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬১৯)

বিজয়ে বিশ্বাসের দ্যুতি
______________________________
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয়ের যে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাতেও ছিল বিশ্বাসের দ্যুতি। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘আমি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ দেশবাসীকে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য ও একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী সমাজ গঠনে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড-৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০১০, পৃষ্ঠা ৩১৪)

স্বাধীকার লড়াইয়ে ইসলামী চেতনা
_____________________________
শুধু ইতিহাসের পরতে পরতেই নয়, এদেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস লোককথায় উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে ইসলামপন্থী ও আলেম উলামার অবদানের কথা। সেটাকে কীভাবে অস্বীকার করবেন? জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ল শ্রেষ্ঠ উপন্যাস খ্যাত 'জোছনা ও জননীর গল্পে, লিখেছেন,
'আরবি শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর কথা। তিনি পাকিস্তানি মিলিটারীদের সামনে ঘোষণা দিলেন যে, পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না। তার এই ঘোষণা শুনে নীলগঞ্জে অবস্থানরত মিলিটারি বাহিনীর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে সেইদিনই সন্ধ্যায় তাকে সোহাগী নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করা হলো। "

পীর মাশায়েখগন ছিলেন চেতনার স্ফুলিঙ্গে
____________________________________
একাত্তরের দিনগুলিতে এদেশের স্বাধীনতাকামী  পীর মাশায়েক, দেশপ্রেমিক ওলী আওলিয়া ছিকেন সাধারন ধর্মপ্রান মুসলিম বাঙ্গালির চেতনার স্ফুলিঙ্গে। তাদের উৎসাহে আল্লাহর উপর ভরসা করে বাঙ্গালিরা ঝাপিয়ে পড়েছিল মরনপন যুদ্ধে। এসব কথা আজো গ্রাম বাংলায় কিংবদন্তির ন্যায় ছড়িয়ে আছে। উঠে এসেছে অনপকের লেখা গল্প উপন্যাসেও।

মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য মাওলানা চরিত্র 
__________________________
আনিসুল হকের লেখা সাড়া জাগানো মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস "মা"র মূল নায়ক আজাদকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিলেন মা।তবে তিনি পীর সাহেবকে খুব মান্য করতেন।পীর সাহেব বলেছিলেন বলেই তিনি আজাদকে যুদ্ধে যেতে দিয়েছিলেন।' এভাবে এদেশের মহান স্বাধীনতার সংগ্রামের সাথে আলেম উলামারা ছিলেব নিবিড়ভাবে জড়িত। ইসলাম ছিল বিজয়ের মূল প্রতিপাদ্য। এতে স্পষ্ট যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলাম ও এদেশের পীর মাশায়েখ এবং আলেম উলামার প্রেরণা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। হুমায়ূন আহমেদ জোৎস্না জননীর গল্পের মতো জনপ্রিয় মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে উঠে এসেছে এক সাহসী মাওলানাট বীরত্বগাথা।

স্বাধীনতার পরতে পরতে ইসলাম 
______________________________
একটি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশের বিজয়ের লড়াইয়ের পরতে পরতে ইসলাম ও তাদের ধর্ম থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার সংযুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের অনুপ্রেরণা বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ঘোষিত হলো তা ইসলামহীন সেক্যুলারিজম নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইসলামসংক্রান্ত অনুষ্ঠান একটু বেশিই যেন প্রচারিত হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বিশেষ কিছুই হতো না। কিন্তু কেন তা হতো? তা হতো এ জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান শ্রোতার কাছে ইসলামী অনুষ্ঠানের বিশেষ আবেদন ছিল।’ (সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত বেহাত বিপ্লব ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, ডিসেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২২৮)

মাদরাসা থেকে চুড়ান্ত  লড়াইয়ের ডাক
________________________________
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই
একাত্তরের ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের অস্থায়ি কার্যালয় ছিল কওমি মাদরাসা চট্টগ্রামের জামেয়া পটিয়াতে। এখানে বসেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও তারবার্তা পেয়ে  মেজর জিয়াউর রহমান একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। বিনিময়ে পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা দানেশসহ ছাত্র-শিক্ষককে পুড়িয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। যেমন পটিয়ার এই মোল্লাবাড়ি (মাদরাসা) থেকে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ডাক এসেছিল ঠিক এভাবেই আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীকার আন্দোলনে আলেম জাতীয় নেতাদের ঐতিহাসিক অবদানগুলোকে আমরা ভুলে গেছি। শহীদ বুদ্ধিজীবী নামের তালিকায় পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম পাক হানাদেরদের হাতে শহীদ হওয়া সেই আল্লামা দানেশের নাম নেই কেন? 

কেন এসব ছিল অজানার গল্প?
____________________________
আলেমরা যে একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনেও চালকের আসনে ছিলেন এটা যেন এ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প। এদেশের নারী বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতীয় মুক্তিযুদ্ধা, বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা, কিশোর মুক্তিযুদ্ধা কতো কিছু নিয়ে কতো ধরনের কাজ গবেষনা হচ্ছে। কিন্তু আলেম মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বন্ধুবর শাকের হোসাইন শিবলীর ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ গ্রন্থ ছাড়া তেমন কোন কাজ হয় নি । কেন কওমি মাদরাসা থেকে একজন শিবলী বা সৈয়দ মবনু কিংবা আনোয়ার আবদুল্লাহ বের হয়ে আসতে অপেক্ষা করতে পাঁচ দশক?

মাওলানারা তবুও কেন অবহেলিত?
______________________________
ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে আজ অপরিচিত মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দূল হামিদ খান ভাসানী কাগমারী সম্মেলনে স্বাধীনতার প্রথম ইঙ্গিতের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর প্রবাসী সরকারের প্রথম বৈঠক হয়েছিল এই মাওলানার সভাপতিত্ব। আওয়ামীলীগ সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ এর ভাষা ও অধিকার আদায়ের জন্য পার্লামেন্টে গর্জে উঠার কাহিনী।

আলেম শহীদ বুদ্ধিজীবী! 
_______________________
শহীদ বুদ্বিজীবী মাওলানা ওলীউর রহমান এর লিখিত বঙ্গবন্ধুর ৬দফার পক্ষে 'শরিয়তের দৃষ্টিতে ৬দফা' , ৬দফা ইসলামের বিরোধী নহে , যুক্তির কষ্টিপাথরে ৬দফা , জয়বাংলা ইসলাম বিরোধী শ্লোগান নহে ইত্যাদি প্রচারপত্র মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক জাগরণধর্মী প্রচারণা। কিন্তু এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাতে কেন আসেন নি আলেম হিসেবে? কাদের কারনে?

মাওলানার খাবার খেয়ে শুরু
হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ! 
______________________________________
তেলিয়াপাড়া দিবস হিসেবে খ্যাত মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সামরিক বৈঠকে একমাত্র বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর মাওলানা আছআদ আলী এম এল এন এর উপস্হিতি ও ঐতিহাসি অবদান । হবিগঞ্জের মাধবপুরের তালিয়াোড়া চা বাগানে তার বাড়ির পাশে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সিদ্ধান্ত মূলক বৈঠকের অন্যতম এক কারিগরই ছিলেন এই মাওলানা। তার খাবার খেয়েই মুক্তিযোদ্ধকে ৭টি সেক্টরকেন্দ্রিক ভাগ করে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আর আজ সেই মাওলানারা…

জমিয়তের অবদান ছিল ঐতিহাসিক
_______________________________
খলিফায়ে মাদানী শায়খে লুৎফুর রহমান বর্ণভী, ফখরে বাঙ্গাল মাওলানা তাজুল ইসলাম, খতিব আমিমুল এহসান, মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমীর মুক্তযোযুদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক ফতোয়া। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর রাজনৈতিক দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক সমর্থন যোগিয়েছিল। যশোর রেল স্টেশন মাদরাসাতে আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরের ঘটনাবলী আজো কেন জানানেই খোদ আলেম প্রজন্মের।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আলেমদের ৩০০টি সমাবেশ
______________________________________
কলকাতায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষেষ ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ ও ফেদায়ে মিল্লাত সৈয়দ আসআদ মদনীর মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ৩০০টি সমাবেশ করে জনমত তৈরি করেন। পাকিস্তানের মুফতি মাহমুদ জালেম সরকারের রক্তচক্ষুর ভয় না করে বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠক ও মুক্তিযোদ্ধকে সমর্থন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ ভাষণে মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীর তেলাওয়াত ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার অবদান। কেন আলেম বিদেশি একাত্তরের বন্ধুদের নাম আড়ালে আবডালে চাপা পড়া।

এই গল্প কেন জানেনা আমাদের প্রজন্ম?
__________________________________
আলেমদের রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামা প্রকাশ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনমত তৈরি করে। জমিয়ত নেতা বাহুবলের পীর সাহেব আব্দুল হামিদ রহ এর মুক্তিযোদ্ধের পক্ষ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। সিলেটের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা উবায়দুল্লাহ জালালালাবাদী, নারায়নগন্জের মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারীর স্বপরিবারে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ। হাতিয়া দ্বীপের সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মোস্তাফিজের গল্প কেন জানানে আমাদের ছাত্র -যুবকরা।

অপেক্ষার ৫০ বছরেও...
_______________________
চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক এর ঐতিহাসিক অবদান। একাত্তরে তার কামরাতেই থাকতেন ৭নং সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল বীর প্রতীক। চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিসেনাদের ক্যাম্প। রাঙ্গুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ইসহাক ও মাওলানা আবুল কালাম বাপ-বেটার স্বশস্ত্র লড়াইয়ের কাহিনী। চন্দ্রঘোনার মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা দলিলুর রহমান। রানীরহাটের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মতিউর রহমান। চট্রলার দুঃসাহসিক গেরিলা কমান্ডার মাওলানা সৈয়দ,  যিনি ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যার পর প্রথম ব্যাক্তি যিনি রাস্তায় প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে নেমে বিদ্রোহ করেছিলেন। পরে সেনারা থাকে হত্যা করে। গঙ্গচড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা আলিফুর রহমানের বীরত্বগাথা। রংপুরেরে দুই আলেম বীর বন্ধু কারী আব্দুস সালাম সরকার ও মাওলানা মোহাম্মদ আলীর কৃতিত্ব। নরসিংদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা বশির উদ্দীন। চান্দিনার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মুখলেছুর রহমানের দুঃসাহসিক অভিযান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মি মাওলানা খাইরুল ইসলাম সহ বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা জাতির সামনে তুলে ধরতে পারিনি।

এই দায় কার?
_____________
ইতিহাস বলে, দাড়ি-টুপিওয়ালা রাজাকারের চেয়ে দাড়িবিহীন প্যান্ট-শার্ট পরা রাজাকারের সংখ্যা একাত্তরে বেশি ছিল। কিন্তু এমন করে ইতিহাস বদল হল কার অবহেলা আর অপরাধে? কওমী মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে কেন একাত্তরের আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আজো নেই? বাধা কোথায়? কেন আধুনিক শিক্ষিত তরুণদের মাঝে আলেম মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের ইসলামি চেতনা নিয়ে নুন্যতম কোন ধারণা নেই? কেন নেই? কাদের কারনে নেই? এই দ্বায়ভার কি আমরা এড়িয়ে যেতে পারব বা এড়িয়ে যাবার আর কোন সুযোগ আছে?

কারা ইতিহাস চেপে রেখেছিল?
____________________________
কারা ইতিহাসকে চেপে রেখেছিল একাত্তরকে। মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস! একাত্তরের চেতনার ইতিহাস! জানানে কেন এই প্রজন্মের বড় একটি অংশ। একাত্তর আলেমদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস কেন আড়াল করা হলো? ৭১এর ইসলামি স্পীডের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে ঈমানী দাবানলের ইতিহাস কেন চাপা দেয়া হল। কেন খোদ কওমী মাদরাসার পাঠ্য বইয়ে নেই বায়ান্ন আর একাত্তরের কথা। লাখ লাখ কওমী তরুনকে ইতিহাস বিমূখ করা হচ্ছে কেন? বিজয়ের ৫০ বছর আজ, কেন আজ এই প্রশ্ন নতুন করে করতে হলো? ৫০বছর কেন অপেক্ষা করতে হলো এই পাঠ্য তৈরির জন্য?

কেন বিজয়ের ঘ্রান নিতে দেয়া হয়নি আলেমদের?
_________________________________
 বামধারার লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদরা কখনো চাননি এদেশে আলেমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন এটা প্রমাণিত হোক। প্রমাণিত হোক মুক্তিযুদ্ধের ইসলামি চেতনার স্ফুলিঙ্গ। তেমনিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রও ইসলামি লেবাস আর লেবেল লাগিয়ে তাদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেছে। আলেমদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের বদনামের তকমাকে কিছুটা হালকা করতে চেয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি? তাদের চক্রান্তেই মূলত বিজয়ের ঘ্রান নিতে দেয়া হয় নি কওমীর সন্তানদের।

পাঠ্য তালিকায় কেন ছিল না একাত্তর???
___________________________________
অপরদিকে অসংখ্য আলেম মুক্তিযোদ্ধা থাকার পরেও আমরা এমন কাউকে পাইনি যিনি আমাদেরকে আলেম মুক্তিযোদ্ধা গল্প, ৫১ আর ৭১ এর গল্গগাথা শোনাবেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও খোদ মাদরাসার পাঠ্যতালিকাতে আলেম মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাস নেই। জীবনী নেই। গল্প-কবিতা নেই। কোন মোসাদ ষড়যন্ত্রে জাতীয় দিবসকে এতোদিন এড়িয়ে চলা হল মাদরাসার আনুষ্ঠানিক ও উদযাপন থেকে? কেন বিজয়ের সুঘ্রাণ নিতে দেয়া হয় নি আলেম প্রজন্মকে? কেন লাল-সবুজের প্রেমময় পতাকা এতোদিন ধরে পতপত করে উড়ানো হল না মাদরাসার আঙ্গিনায়। এতে কি লাভ হল? কার লাভ হল?

এই গর্ব আমার;
______________________
কেন আজ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে মাদরাসার ছাত্ররা অজ্ঞতাবশত কথিত চেতনাধারী ও ঠিকাদারদের সামনে মুখ ছোট করে রাখতে হয়? কাদের অবহেলা ও দৈন্যতার কুফল এসব? এখনো কি এ নিয়ে আলেমদের ভাবনার সময় হয় নি? নিজ দেশে পরবাসির মতো, পরগাছা ভাব নিয়ে আর কতকাল? ইসলামে কী এসব নিষিদ্ধ?  নাকি অন্য কিছু। বিজয় দিবসে আমরা কেন পারিনা ইসলামি ধাচে বিষয়টি উদযাপন করতে। আমরা কেন ইতিহাস চর্চা করে বুক ফুলিয়ে বলছি না এদেশ আমার, আমরা এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]