সরকারি চাকরিজীবী মো. মুনসুর শেখের থাকেন মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় সব উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রসেস সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি করেছেন তিনি। সরকারি চাকরি করে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন তিনি। বড় ছেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় চাকরি করেন ও ছোট ছেলে ব্যবসা করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পারিবারিক কলহের কারণে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে ছাড়া থাকছেন বৃদ্ধাশ্রমে।
মুনসুর শেখ বলেন, আমি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকরি করতাম। চাকরি করে আমি ছেলেমেয়ে বড় করেছি। এখন তারা বিভিন্ন জায়গায় আছে, নিজের মতো করে। আমাকে দেখাশোনা করে না, তাই আমি বৃদ্ধাশ্রমে এসে আছি।
এক সময় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ফরিদা বেগমের। সব কিছু মিলে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কেটে যাবে বলে আশা করেছিলেন তিনি। তবে যে সন্তানদের সুখে রাখতে নিজের সর্বস্ব দিয়েছেন, তারাই আজ তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।
ফরিদা বেগমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্ররাজপুরে। গত তিন মাস ধরে তার আশ্রয় হয়েছে মহানন্দা প্রবীণ নিবাসে।
ফরিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগে ছোট ছেলের কাছে থাকতাম। ছেলের বউ আমাকে বাড়িতে রাখবে না, তাই আমার বিছানা-কাপড় সব কিছু ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর আমার মেয়ের কাছে থাকতে শুরু করি। সেখানে এক বছরের মতো থাকি। কিন্তু মেয়ের সংসার, সেখানে ভালো ওষুধ পাচ্ছিলাম না। তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। জামাইয়ের বাড়িতে থাকতে লজ্জা লাগছিল। পরের ছেলের বাড়িতে আর কতো থাকব, আর কতো খাব। তার জন্য আমি বাধ্য হয়ে এখানে বৃদ্ধাশ্রমে চলে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, এখানে (বৃদ্ধাশ্রমে) আল্লাহ আমাকে খুব ভালো রেখেছেন। এখানে নিয়মিত খাবার, কাপড় ও ওষুধ পাচ্ছি। তাই আল্লাহকে কহেছি, এখান থেকেই যেন কাফনের কাপড় পরিয়ে বিদায় করেন। নামাজ পড়ি আর এই দোয়াই করি।
অপরদিকে রাজশাহী শহরের টিকাপাড়া এলাকার মিনা বেগম গত দেড় বছর থেকে থাকছেন এই প্রবীণ নিবাসে। তিনি প্রায় ৪০ বছর যাবত বাসা-বাড়িতে কাজ করে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেছেন।
মিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামী অনেক দিন আগে মারা গেছে। স্বামীর চেহারা ভালোভাবে মনে পড়ে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রায় ৪০ বছর যাবত মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করে চার ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি। এখন তাদের কাছে আমার জায়গা হয়নি।
সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কথা মনে পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন মনে পড়বে তাদের কথা (কান্না জড়িত কণ্ঠে), তারা কি আমাকে মনে রেখেছে। তাদের জন্য মন খারাপ হয় না, কী হবে মন খারাপ করে।
মহানন্দা প্রবীণ নিবাসের ম্যানেজার মো. আলিউল রেজা আলম বলেন, বর্তমানে প্রবীণ নিবাসে সাতজন পুরুষ ও ছয়জন নারী মোট ১৩ জন আছেন। জনগণের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান দিয়ে এই প্রবীণ নিবাস চলছে। বৃদ্ধাশ্রমের অবকাঠামো বিত্তবানদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান থেকেই তৈরি করা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছিল তা দিয়ে ছাদ ও রাস্তার কাজ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে আমাদের জায়গার অভাবে ঠিকমতো নিবাসী রাখতে পারছি না। ওপরের বিল্ডিং সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন। তাই বিত্তবানদের সহযোগিতার আহ্বান জানাই।
ভোরের পাতা/আরএস