বুধবার ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭ পৌষ ১৪৩১

শিরোনাম: স্ত্রীসহ সাবেক ডিএমপি কমিশনারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা   গাড়ি কিনতে ঋণের পরিমাণ বাড়ালো ব্যাংক   নব্য ফ্যাসিবাদ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে: জি এম কাদের   পুলিশের ৩ অতিরিক্ত আইজি বাধ্যতামূলক অবসরে   তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগে আইনি নোটিশ   প্রত্যেক বিভাগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিস হবে   ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ঘটনা: সেনাপ্রধান   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আগ্রাসী পদ্মা এখন ধু-ধু বালুচর, অস্তিত্ব সংকটে আরও তিন নদী
মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪, ৪:২০ এএম | অনলাইন সংস্করণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হাঁক ডাক দিয়ে পানি দিবস পালিত হলেও  আগ্রাসী পদ্মা নদী এখন মরুর মতো ধু-ধু বালুচর। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও খানিকটা পানির বিস্তৃতি। উৎস ও উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে বালু। পদ্মায় পানি সংকটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও তিন নদীর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। স্থানীয়রা বলছেন, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার  বিকল্প নেই।

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে মাস তিনেকের জন্য পানি থাকলেও বছরের নয় মাসই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে ঘোলা পানি আর স্বচ্ছ পানির মায়াবী দৃশ্য আর নেই। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে। পানি শূন্য পদ্মায় আটকে যাচ্ছে পাথরবাহী জাহাজ। মাঝ নদীতে গোসল করছে শিশুরা।

পদ্মা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানন্দার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। আর পাগলা নদীর আগের পাগলামিও নেই। পূর্ণভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। ভারতের অংশে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী অস্তিত্ব হারানোর পথে।

এবারও পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে। সামনে রয়েছে খরা মৌসুমে চৈত্র-বৈশাখ। তখন ‘কি মরণ দশা হবে’ তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। হারিয়ে গেছে অর্ধশত বেশি প্রজাতির মাছ। নৌ-যোগাযোগ আর নেই। নদীর বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকেরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল।

স্থানীয় কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জমি মহানন্দা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়। পরে ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করছি।’ সরেজমিন দেখা গেছে, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে এ মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে করে। এ নদী এক সময় ছিল প্রবল খরস্রোতা এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল আতঙ্ক। বর্তমানে এ নদী নাব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচে পড়ে, আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে পানি থাকে না। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। পদ্মা নদী তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবারড্যাম নির্মাণকাজ চলছে। 

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব বলেন-১৯৭৪ সালে পদ্মায় পানি সংকটের বিষয় একটি চুক্তি হয়। চুক্তিটা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হিসেবে পরিচিত। চুক্তি  অনুসারে উজানের দেশ ভারত শুস্ক মৌসুমে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা। বিষয়টি বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদী খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ চলতি বছরে শেষ হবে। এতে করে ৫৪ কিলোমিটার নদী অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপটেন জাহাঙ্গীর হতে ভোলাহাট মহানন্দা নদী  পর্যন্ত ১৪ ফিট নেমে উপরে উঠবে। ফলে মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীতে স্বরূপে ফিরে আসবে। নতুন করে জীব বৈচিত্র স্বরূপে ফিরে আসবে এবং বাড়বে মাছ চাষ। কৃষি ক্ষেত্রে রাবার ড্যামের প্রভাবে বিপ্লব ঘটবে। 

পদ্মায় পানি না থাকায় ভারতের ময়া ও বাংলাদেশের  গোদাগাড়ী নতুন নৌ বন্দরের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পানি বিশেষজ্ঞগণ কাজ করছেন, অচিরেই সমস্যার দুর হবেন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষ করে বিমানবন্দরে পানির ব্যাপারে সাংবাদিক উত্তরে বলেছিলেন ও এটা তো আমি ভুলে গেছিলাম। তিনি আরও বলেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত বাধা এড়িয়ে আমাদের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ছিট মহলসহ সব সমস্যা দূর করেছেন। পানির সমস্যা তার আমলেই দুর হবে ইনশাআল্লাহ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]