ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আজ শুক্রবারের (২২ মার্চ) মধ্যেই এই ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে,গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় ‘মানবিক বিরতি’র আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইসরায়েল ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কট্টর মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে গাজা যুদ্ধে দৃঢ় সমর্থন জানালেও, ধীরে ধীরে সুর পাল্টাতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে ওয়াশিংটনের সবশেষ খসড়া প্রস্তাবটি এ ইস্যুতে তাদের আরও কঠোর অবস্থানের বিষয়টিই প্রমাণ করে।
ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং গাজায় সৃষ্ট তীব্র মানবিক সংকটের পর বৈশ্বিক নিন্দার মুখেই এমন অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘে দেয়া মার্কিন খসড়া প্রস্তাবে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তা বিতরণের অনুমতি দেয়ার জন্য ‘তাৎক্ষণিক এবং টেকসই যুদ্ধবিরতি’র বিষয়টিকে ‘অপরিহার্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
খবরে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলে হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির বিষয়টিও সেখানে শর্ত হিসেবে থাকবে। এর আগে, গেল ফেব্রুয়ারিতেই যুদ্ধবিরতির কথা এড়িয়ে গিয়ে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা নিজেরাই এখন সেই প্রস্তাব আনল।
শুক্রবারের ভোটের কথা ঘোষণা করে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, মার্কিন কূটনীতিকরা একটি রেজুলেশন নিয়ে কাজ করছেন, যা একটি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন করবে এবং জিম্মিরা মুক্তি পাবে। এর ফলে মানবিক সহায়তার পথও খুলবে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তার জন্য আরও মানবিক সহায়তা দেবার ওপর আলোকপাত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার মিশর সফর করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে বৈঠকে ব্লিংকেন অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি বাকি সব জিম্মির মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক জর্ডান, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিদের সাথেও বৈঠক করেন।
এদিকে রাফায় অভিযান চালানো যাবে না। ইইউর বৈঠকের পর এই আবেদন জানিয়েছেন ইউরোপের একাধিক দেশের প্রধানরা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, এবার রাফায় অভিযান চালাবে ইসরায়েলের সেনা। তার আগে রাফা ছেড়ে সকলকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রাফা হলো,গাজার সাথে মিশরের সীমান্ত। এতদিন এই সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো হচ্ছিল। নেতানিয়াহু বলেছেন, ওই সীমান্ত দিয়ে কেউ চাইলে গাজার বাইরে চলে যেতে পারেন। চাইলে উত্তর গাজায় যাওয়া যেতে পারে। কারণ, এবার ইসরায়েলের বাহিনী রাফায় অভিযান চালাবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ইসরায়লের বাহিনী উত্তর এবং দক্ষিণ গাজায় অভিযান চালিয়েছে। সে সময় কয়েক লাখ মানুষ রাফার শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন তাদের পক্ষে সেই শিবির ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
ভোরের পাতা/আরএস