এশিয়া মহাদেশে প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার কুমিরের পিঠে, সুন্দরবনে অবমুক্ত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪, ৭:৩৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
এশিয়া মহদেশের মধ্যে এই প্রথম নোনা পানির কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের গহীন নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে কুমির বিশেষজ্ঞ শ্রীলঙ্কার ড. রু-সোমাওয়ারি ও অস্ট্রেলিয়ার ড. পাউল সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির “জুলিয়েট” এবং যশোরের মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা কুমির “মধুর” শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার ডিভাইস বসিয়ে গহীন সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। এসনময় বন বিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর জানান, কতুমির দুটির পিঠে এ স্যাটেলাইট ট্রন্সমিটার বসানোর মাধ্যমে উম্মুক্ত কুমিরের গতিবিধি, চলাচল ও এর আগে যেসব কুমির নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে তাদের আচারণ, লবন পানিতে টিকে থাকা ও কুমরের ডিম দেয়া ছাড়াও তাদের বাচ্ছা থেকে বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত তথ্য (সারভাইভাল রেট) জানা যাবে। এ দুটি কুমিরের পাশাপাশা এক সপ্তাহের মধ্যে আরও তিনটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার ডিভাইস বসিয়ে বনের নদীতে অবমুক্ত করার কথা রয়েছে বলে জানায় আজাদ কবির। এ স্যাটেলাইটের সময়সীমা আগামী দেড় বছর এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরবনে উম্মুক্ত করা নোনা পানির কুমিরের আচারণ, গতিবিধি, চলাচল ও লবন পানিতে তাদের বংশ বৃদ্ধি কৌশল ও অস্তিত্ব টিকে থাকার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে এ স্যাটেলাইট ডিভাইজের মাধ্যমে। প্রতি আধ ঘন্টা পর পর এর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। তা থেকে নির্ধারণ করা হবে সুন্দরবনের মধ্যে বসবাস করা নোনা পানির কুমিমের তথ্য।
বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বিকেলে সুন্দরবনের ভদ্রা অফিসে বসে ট্রান্সমিটার বসানোর কার্যক্রম শেষ করা হয়। পরে কুমির অবমুক্ত কার্যক্রম শুরু করা হয় রাতে, এগুলেকে বনের ভদ্রা নদীতে চরে অবমুক্ত করেণ এ বিশেষজ্ঞ টিম। কিছুক্ষন পর কুমির দুটি নিজ ইচ্ছায় নদীতে নেমে যায়, তবে কুমিরে পিঠে অস্ত্রপাচার করে বসানো স্যাটেলাইট ট্রন্সমিটার কিছুটা অসস্ত্রীকর হলেও কিছু দিন যাওয়ার পর তা ঠিক হয়ে যাবে বলে ওজানায় এ টিমে,র সদস্যরা।
শুরু থেকে এ কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল করিম, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, আইইউসিএনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সরোয়ার আলম দীপু, মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান, করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর সহ বন বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের সাথে ছিলেন।
সুন্দরবন পর্যটক ষ্পট ও করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুমির বিশেষজ্ঞ হাওলাদার আজদ কবির আরো বলেন, সিষ্টি পানির ও নোনা পানির কুমির প্রায়ই বিলুপ্তির পথে। তাই নোনা পানির কুমিরকে বাঁিচয়ে রাখার জন্য পুরো সুন্দরবনের বাংলাদেশের মধ্যে একটি মাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্র করমজল। সেখানে ২০০২ সাল থেকে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে তা বড় বানিয়ে প্রতি বছর কমবেশী সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়। এর আগে বাটাগুড় বাস্কা কচ্চপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছিল। এবার কুমিরে পিঠে স্যটেলাইট ডিভাইস বসানো হলো, এ কুমির নোনা পানির মধ্যে বসবাস করা, চলাচল, একে অপারের সাথে আচারণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা যাবে এ ডিভাইসের মাধ্যমে। পর্যাক্রমে আরো অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বন বিভাগের বলে জানায় বন বিভাগের এ কর্মকর্তা।