ড. আহমদ কায়কাউস সম্বন্ধে প্রশাসনের অনেকে মনে করেন যে, তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে আমলাতন্ত্রে বিকশিত হয়েছেন। চাকরি জীবনে কোথাও তিনি কখনও বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হননি। বরং তার প্রাপ্য সুযোগ সুবিধার চেয়েও তিনি বেশি পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, ড. আহমদ কায়কাউস একজন ব্যতিক্রমী মেধাবী আমলা। সে জন্যই তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখে সুবিধাজনক জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় যে, ড. আহমদ কায়কাউস এর চাকরির গ্রাফটা সব সময় ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
শুধুমাত্র বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একবার তিনি পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছিলেন৷ তবে এই সময় তাকে খুব একটা শাস্তি পেতে হয়নি। কারণ তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য তখন শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ড. কায়কাউসকে। একে একে তিনি সবগুলো ধাপ পেরিয়ে বিদ্যুৎ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে তিনি চুক্তিও পেয়েছেন। এরপর তিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছিল যে, নির্বাচনের পরপর তার চাকরি ছাড়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবেন। সরকারের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টা হিসেবে তাকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার পিআরএল পুনর্বহাল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেই প্রজ্ঞাপনে তিনি নিজেই ফেঁসে গেছেন বলে প্রশাসন ক্যাডারের কেউ মনে করে। যেমনটি ঘটেছিল কবির বিন আনোয়ার এর ক্ষেত্রে, ঠিক একই ফাঁদে পড়েছেন ড. কায়কাউস এমনটিই মনে করেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।
কবির বিন আনোয়ার রাজনীতি করার জন্যই আগ্রহী ছিলেন। একারণে মাত্র ১৪ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকার পর তিনি অবসরে যান। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর তাকে সরকারের নীতি অনুযায়ী এক বছরের জন্য পিআরএলে যেতে হয়েছিল। এই পিআরএলে থাকার কারণে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদ পদবী পাননি। এমনকি নির্বাচন পরিচালনার সময়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দায়িত্ব পাননি। যদিও নেপথ্যে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। কবির বিন আনোয়ারের পিআরএল শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
অনেকের ধারণা করেছিল যে, তিনি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হবেন কিংবা উপদেষ্টা হবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। এটি না ঘটার পিছনে অনেকেই মনে করেন যে, পেশাদার দক্ষ আমলা হিসেবে পরিচিত আহমদ কায়কাউসের ভূমিকা রয়েছে। যদিও আহমদ কায়কাউসের অনুসারীরা এই ধরনের বক্তব্য খন্ডন করেন। তারা মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে কেউ প্ররোচিত করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী স্বায়ী বিবেচনায় এবং ইচ্ছায় বিভিন্ন পদায়ন, মন্ত্রী নিয়োগ, উপদেষ্টা নিয়োগ করে থাকেন।
কিন্তু ড.আহমদ কায়কাউসের পিআরএল পুনর্বহালের ফলে তিনি আর সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রে থাকতে পারছেন না অন্তত একবছর। ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে পিআরএলে থাকতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা একজন ব্যক্তির চুক্তির অবসানের পর তিনি পিআরএলে যান কিনা।
এ নিয়ে প্রশাসনের দুই রকমের মতামত পাওয়া গেছে। একটি মতামত হচ্ছে, এ ধরনের ক্ষেত্রে পিআরএল থাকার কোন কথা না। এর আগে যখন তথ্য সচিব মকবুল পদত্যাগ করেছিলেন বাধ্য হয়ে তখন তিনি আর পিআরএল পাননি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ যারা থাকেন তাদের পিআরএল বাতিল করেই তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আহমদ কায়কাউসকে আবার পিআরএল কেন দেওয়া হল সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তবে কেউ কেউ বলেন যে, যখন একজন ব্যক্তি চুক্তিতে যান তখন তার পিআরএল স্থগিত করেই তাকে চুক্তিতে দেওয়া হয়। যেহেতু তিনি চুক্তিতে ছিলেন পিআরএল স্থগিত করে। কাজেই তার চুক্তি বাতিল হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তার পিআরএল আবার নতুন করে চালু হয়েছে। তবে পিআরএল একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য চাকরির মতোই। এখানে তিনি পূর্ণকালীন বেতন পান। শুধু তাকে কাজ করতে হয় না। কিন্তু এ সময় তিনি অন্য কিছুর সঙ্গে জড়াতে পারবেন না। তাহলে ড. আহমদ কায়কাউস এখন কি করবেন?