দক্ষিণ ইয়েমেনের লোহিত সাগরে একটি কার্গো জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে দেশটির শক্তিশালী সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠী। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
এর আগে হুথিদের হামলায় ‘ট্রু কনফিডেন্স’ নামের এই জাহাজটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মূলত গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের জেরে হুথিরা গত প্রায় ৫ মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে হামলা করছে এবং এই ধরনের হামলায় এবারই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইয়েমেনে একটি পণ্যবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিন ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হামলার পর বার্বাডোজের পতাকাবাহী ট্রু কনফিডেন্স জাহাজ থেকে ক্রুরা পালিযে যান এবং হামলার জেরে সৃষ্ট আগুন নিয়েই জাহাজটি সমুদ্রে ভাসছিল।
মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টায় এডেন উপসাগরে কার্গো জাহাজ ‘ট্রু কনফিডেন্সে’এই হামলার ঘটনা ঘটে। হুথিরা বলছে, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিতেই তাদের হামলা চলছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক কর্মকাণ্ড ও অপারেশন তত্ত্বাবধান করে থাকে। সেন্টকম বলেছে, হামলায় তিনজন ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন এবং অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে সেন্টকম আরও বলেছে, ‘হুথিদের এই বেপরোয়া আক্রমণগুলো বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং আন্তর্জাতিক নাবিকদের জীবন কেড়ে নিয়েছে।’
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠী বলেছে, ট্রু কনফিডেন্সের ক্রুরা হুথি নৌবাহিনীর জারি করা সতর্কতা উপেক্ষা করেছিল।
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তারা এর আগে হুথিদের এই হামলায় দুজন নিহত ও আরও ছয়জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। পরে নিহতের সংখ্যা তিনজন বলে জানানো হয়।
বিবিসি বলছে, জাহাজটিতে ২০ জন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ভারতীয়, চারজন ভিয়েতনামী এবং ১৫ জন ফিলিপিনো নাগরিক। এছাড়া তিনজন সশস্ত্র রক্ষীও ছিল জাহাজটিতে। যাদের মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার এবং একজন নেপালের।
জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ইয়েমেনের এডেন শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটিতে হামলা হয়। তবে ক্রুদের অবস্থার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনও কিছু জানাতে পারেনি।
এদিকে হামলার পর হুথি পরিচালিত আল-মাসিরাহ টিভি বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, হুথি-নিয়ন্ত্রিত লোহিত সাগরের বন্দর শহর হুদেইদাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে।
মূলত ইরান-সমর্থিত হুথিরা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট দিয়ে যাতায়াতকারী ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে এবং তাদের এই হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর হুথিদের জাহাজে বারবার হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই ইয়েমেনে হামলা করছে।
লোহিত সাগরে হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের। মূলত হুথিরা রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুথিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা। হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।