প্রকাশ: রোববার, ৩ মার্চ, ২০২৪, ৯:১৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও সংলগ্ন পদ্মার চরে সূর্যমুখীর দৃষ্টিনন্দন ফুলের সমারোহ দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় জমছে। আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় সূর্যমুখীসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূরদুরান্ত থেকে আগাত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও পরিবার পরিজন নিয়ে দল বেঁধে পদ্মার চরে আসছেন সূর্যমুখীর জমিতে। ছবি-সেলফি তুলতে ঢুকে পড়ছেন জমির ভিতরে। পিছিয়ে নেই টিকটকাররাও।
এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কামারগাঁও এলাকার কৃষক মো. কাউসার খান। ভুক্তভোগী কাউসার খান বলেছেন, সূর্যমুখী দেখতে প্রতিদিন বিকালে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী-পুরুষ আসছে পদ্মার চরে। তাদের পদচারণায় জমিতে অপরিপক্ক সূর্যমুখীর ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া আশ পাশের অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। দর্শনার্থীরা ছবি-সেলফি তুলতে জমিতে প্রবেশ করছে। ফুল ছিড়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে গত শুক্রবার বিকালে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রাইভেটকার ও দুই শতাধিক মোটরসাইকেল ও দেড় শতাধিক ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক নিয়ে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে সূর্যমুখীর জমিতে। এসব মানুষের ভিড় ঠেকাতে রিতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে। পাহাড়াদাররাও লোক ঠেকাতে পারছে না। সুযোগ বুঝে দর্শনার্থীরা ক্ষেতের ভিতরে ঢুকে পড়ছে।
তিনি জানান, প্রথম বারের মত চরের ১৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করছেন। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সূর্যমুখীর প্রায় ১০ কেজি বীজ ও কিছু সার প্রদান করা হয় তাকে। খোলাবাজার থেকে ৬/৭ কেজি বীজসহ প্রয়োজনীয় সার ক্রয় করতে হয়েছে। তিনিসহ মোট ৪ জন মিলে সূর্যমুখীর ক্ষেতি করছেন। এ চাষে সর্বমোট ৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরছেন তারা। কৃষক কাউসার খান আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে সূর্যমুখীর জমিতে দর্শনার্থীদের পদচারণা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছেনা। বিকাল হলেই পুরো জমির চারপাশ ঘিরে শতশত নারী-পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন। ফসলের ক্ষতি না করার জন্য দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, সব ঠিক থাকলে আর এক মাস বাদে সূর্যমুখীর ফুল থেকে দানাদার তেলবীজ সংগ্রহ করবেন। তবে তেলবীজ সংগ্রহ করার কোন আধুনিক মাড়াই যন্ত্র নেই তার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মার চরে সবুজের বুকে সূর্যমুখী ফুলের হাসি।
বসন্তের হিমেল হাওয়ায় সূর্যমুখী ফুল হেলে দুলে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরো রাঙ্গিয়ে তুলেছে। অবিরাম এমন নজরকারা সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের আকৃষ্ট করছে। গত শনিবার পরন্ত বিকেলে মন-মুগ্ধকর সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের জমির চার পাশ হেঁটে বেড়াতে দেখা গেছে। ছবি-সেলফি তুলতে ঢুকে পড়ছেন ক্ষেতের ভিতরে। এ সময় মো. জহিরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সূর্যমুখীর বিশাল জমির পাহাড়ায় ৪ জন কাজ করছেন।
বিকাল থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত সূর্যমুখীর ক্ষেতের পাহাড়া দেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীনগরে আড়িয়ল বিল এলাকার পুর্ব-বাড়ৈখালীর মো. মোরছালিম ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে ব্যাপক সারা ফেলেছেন। এখানেও দৃষ্টিনন্দিন সূর্যমুখী ফুল জৌলুস ছড়াচ্ছে। এখানেও দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ভাগ্যকুল ইউনিয়নের উপসহকারী (দায়িত্বপ্রাপ্ত-কামারগাঁও ব্লক) কৃষি অফিসার সাবিত্রী রানী সরকার জানান, পদ্মার চরে সূর্যমূখীর চাষ হচ্ছে। একাধিকবার পরিদর্শনে গিয়েছি। চরে কাদেরী জাতের সূর্যমুখীর চাষাবাদ হচ্ছে। সূর্যমুখীর ক্ষেত দেখতে দর্শনার্থীর পদচারণায় অপরিপক্ক সূর্যমুখীসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির বিষয়ে জানতে পেরেছি।
মানুষের ভিড় ঠেকাতে ক্ষেতে বেড়া দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে পাহাড়াদার রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষককে পরামর্শ দেওয়ায় হয়েছে। শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, উচ্চ ফলনশীল সূর্যমুখীর চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে প্রণোদনার আওতায় এ বছর ৪০ জন উদ্যোক্তাকে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।