আরেক দফা ভাঙ্গনের মুখে সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। এবার দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরোধ চরম আকারে ধারণ করেছে। দলীয় নানান বির্তকিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দ্বাদশ নির্বাচন বয়কট করে রওশনপন্থিরা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সংসদে জায়গা হয়নি তার অনুসারীদের। একারণে অনেকটা অস্থিত্ব রক্ষার তাগিদে এরশাদ পত্নী আগামী ৯ মার্চ শনিবার জাতীয় পার্টির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের ভাঙ্গন ঠেকাতে আগামী ৯ মার্চ শনিবার দলটির কেন্দ্রিয় কার্যালয় বনানীতে যৌথ সভা ডেকেছে।
সূত্র জানিয়েছে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সকল সদস্যসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ২মার্চ সকাল ১০টায় উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা জারী করেছেন জিএম কাদের।
সূত্র জানিয়েছে, জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাম্প্রতিক কালে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে রওশন শিবিরে যাওয়ায় বহিস্কার করেছে। আর এ তালিকা বেশ লম্বা। এ কারণে জিএম কাদেরের অনুসারীরা মনে করেন রাগের মাথায় দলের বেশ কয়েকজন বিশেষ করে মশিউর রহমান রাঙ্গা, ফিরোজ রশীদ, আবুল হোসেন বাবলা,সুনীল শুভ রায়ের মতন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দল থেকে বহিস্কার করায় দলটির তূণমূলে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। এ কারণে তারা খুব সহজেই রওশন এরশাদের সঙ্গে ভীড়লে জিএম কাদের পন্থিদের বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কারণ যেসব সিনিয়র নেতাদের রাগের মাথায় জিএম কাদের বহিস্কার করেছেন তাতে পজেটিভ ফলাফল পাবে রওশন এরশাদ। যার দরুন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া রওশন এরশাদ কিছুটা কোনাঠাসা হয়ে গেলেও সম্মেলনের মাধ্যমে ঘুওে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, সম্মেলনে জিএম কাদেরের বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাও রওশন শিবিরে ভিড়তে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে দলের পৃথকভাবে জাতীয় সম্মেলন করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন রওশন এরশাদ, সেটিকে গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বলেছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছেন, কেউ যদি জাতীয় পার্টির নামে ব্রাকেটবন্দী আরেকটা দল করতে চান, করতে পারেন। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আছে জাতীয় পার্টি, এটির সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক নেই।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রবিবার গুলশানে নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে রওশন তাঁর পক্ষের নেতা–কর্মীদের নিয়ে আগামী ৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিল বাস্তবায়নের জন্য কমিটি ঘোষণা দেন। রওশন এরশাদ কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহযোগী–আহ্বায়ক এবং সফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি ঘোষণা করেন।
এদিকে রওশনের এই উদ্যোগের সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা কোনো কাউন্সিল ডাকি নাই। বাইরে কে কাউন্সিল ডাকল তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যরা ১০টা কাউন্সিল করতে পারে, কমিটি হতে পারে, তাতে আমাদের কিছু আসে–যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ৪-৫টা আছে। জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), জাতীয় পার্টি কাঁঠাল গ্রুপ, জাতীয় পার্টি সাইকেল মার্কা, জাতীয় পার্টি মই মার্কা। আরেকটা গ্রুপ হতেই পারে।’ রওশন এরশাদ তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য কমিটি ঘোষণা করেছেন। এই কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে প্রথমবারের মতো রওশন এরশাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে এলেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
এ বিষয়ে মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবু হোসেন বাবলা অন্য কোথাও যেতে চাইলে পদত্যাগ করলেই শোভনীয় ছিল। তিনি অন্য ফোরামে বক্তব্য দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন। সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) আগামী ২ মার্চ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে যৌথ সভা ডেকেছে। ওই দিন বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।গতকাল বৃহস্পতিবার জাপার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। এতে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন দলের মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক।