শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: লেবাননের ৬০ গ্রামে ফেরা নিয়ে ইসরায়েলের সতর্কতা   কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভে বাংলাদেশের নিন্দা   চিন্ময়, ইসকন ও সংখ্যালঘু নিয়ে ফের যা বলল ভারত   আমাদের দেশ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে আলোচনা কেন?   ইসকনের নামে আ.লীগ নতুন করে আসার চেষ্টা করছে: হেফাজত   জুলাই স্মরণে ‘শহিদি সপ্তাহ’ ডিসেম্বরে   দেশের ৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস, বাড়তে পারে তাপমাত্রা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রাজধানীতে “বমি” পার্টির দৌরাত্ম্য
#প্রধান টার্গেট প্রবাসফেরত যাত্রী #ছিনতাইয়ে নয়া কৌশল চক্রটির
খান শান্ত
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৩:৩৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ

ছিনতাইয়ের জন্য নিত্যনতুন কৌশলও অবলম্বন করছে অপরাধীরা। তেমনি এক ছিনতাইচক্র পরিচিতি পেয়েছে ‘বমি পার্টি’ নামে। ইদানীং বেড়েছে ‘বমি পার্টি’র দৌরাত্ম্য। বাসযাত্রী ও পথচারীদের ওপর বমি করে চক্রের সদস্যরা ছিনিয়ে নিচ্ছে টাকা ও মূল্যবান জিনিস। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহই ঘটছে। এ ছাড়া বড় যে কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। গত শুক্রবার এমন একটি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সাভার থানা পুলিশ। 

জানতে চাইলে সাভার থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুল ইসলাম বলেন, সাভার পরিবহনের একটি বাসে নবীনগর থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বিনয় মন্ডল নামের এক ব্যবসায়ী। সঙ্গে ছিল এক স্বজনের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা। বাসটি সাভার বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর গায়ে বমি করে দেন পাশের সিটে বসা চক্রের এক সদস্য। তিনি কাপড় থেকে বমি পরিষ্কারের জন্য উঠে দাঁড়ান। এ সময় তাকে ঘিরে ধরে কয়েকজন। কয়েক সেকেন্ড পরই বমি করা ওই ব্যক্তিসহ তারা বাস থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষণ পর যাত্রীটি বুঝতে পারেন তার পকেটে রাখা ৫০ হাজার টাকা নেই। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যবসায়ী বাস থেকে নেমে লোকজনের সাহায্য নিয়ে ওই চক্রের ৪ সদস্যকে ধরে ফেলে। পরে সাভার থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এর পাঁচ দিন আগে গত ৩ জুলাই সায়েদাবাদ থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন আরিফ মাতুব্বর। বাসটি আসাদগেট পৌঁছালে তার গায়ে বমি করে দেন পাশে বসা যাত্রী। নিজেকে সাফ করার ফাঁকে টের পান তার পকেটে থাকা ৩০ হাজার টাকা ওই ব্যক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সময় তিনি চিৎকার দিলে বাসে থাকা অনান্য যাত্রীরা রয়েল নামের ওই প্রতারককে ধরে ফেলেন। পরে পাশের পুলিশ বক্স থেকে পুলিশ এসে চক্রের রয়েলকে আটক করে। কেবল উপরের ঘটনা দুটো নয়। 

জানা গেছে, তিন-চার বছর ধরে ‘বমি পার্টি’ নামে এ চক্রটি ঢাকায় সক্রিয়। তারা কোনো একটি ঘটনা ঘটিয়ে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার চালাচ্ছেন এমন কার্যক্রম। বিশেষ করে প্রবাসফেরত যাত্রী, ঢাকার বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের বেশি টার্গেট করছে চক্রটি। পুলিশ বলছে, চক্রটির কয়েকটি গ্রুপ আছে। প্রত্যেকটি গ্রুপে সাতজনের বেশি সদস্য আছে। রাজধানীর রামপুরা, গাবতলী, বিমানবন্দর রোড, কুড়িল, ফার্মগেট, শাহবাগ, সায়েদাবাদ, শ্রীপুর, গাজীপুর-টু-ময়মনসিংহ রোডে বেশি সক্রিয় আতঙ্ক হয়ে ওঠা এই ‘বমি পার্টি’। চক্রের সদস্যরা টার্গেটের শরীরে বিশেষ ধরনের ‘পিক’ ফেলে কৌশলে লুটে নিচ্ছে টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। রাজধানীর দশের অধিক স্পটে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে পাঁচ ‘বমি পার্টি’ গ্রুপ। একেকটি গ্রুপে সদস্য রয়েছে ছয় থেকে আট জন। গ্রুপের সদস্যদের প্রায় সবাই বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিবাসী।

পুলিশ সূত্র বলছে, তাদের তৎপরতা রোধে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রত্যেক থানাকে বিশেষ সতর্কতা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকার বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, এমন ঘটনা আব্দুল্লাহপুর এলাকায় প্রায়ই ঘটছে। এসব ঘটনার শিকার ভুক্তভোগীরা সাধারণত থানায় অভিযোগ করেন না। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, চক্রটি আশুলিয়া, আব্দুল্লাহ, সাভার, সায়েদাবাদ-টু-গাবতলী, মালিবাগ-টু-উত্তরা বিমানবন্দর, ফার্মগেট-টু-কুড়িল এবং শাহবাগ-টু-মিরপুরগামী বাসগুলোর যাত্রীদের বেশি টার্গেট করে থাকে। তারা কারও কাছে টাকা পয়সা আছে জানতে পারলেই তার পিছু নেয়। এ ধরনের দুই-একটি ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার হলেও চক্রটির বেশিরভাগ সদস্যকে এখনো শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি।এর আগে গত ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জ থেকে বমি পার্টির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী মৌমিতা বাসে রনি নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ‘বমি পার্টি’র সদস্যরা। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করা হয়। সেই মামলায় সংশ্লিষ্ট বাসের চালক ও হেলপারকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।শুধু রাজধানী নয়, চট্টগ্রাম নগরেও সক্রিয় ‘বমি পার্টি’র সদস্যরা। গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে রনি মিয়া, মো. রানা, মো. সুমন ও নাঈম আলম নামে ‘বমি পার্টি’র চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগরীতে ‘বমি পার্টি’র ৫টি চক্র আছে। তাদের দুটিকে তারা ধরতে সক্ষম হয়েছেন।কোতোয়ালি থানার এসআই মেহেদী হাসান জানান, রনি নামে ময়মনসিংহ জেলার এক ব্যক্তির হাত ধরেই মূলত চট্টগ্রামে ‘বমি পার্টি’ সূচনা। ছয়জনকে নিয়ে রনি এই পার্টি শুরু করে। তারাই এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন কাজ করছে।ঢাকায় কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঢাকায় মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটছে। তাদের খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ভুক্তভোগীরা কেউ থানায় অভিযোগ করছেন না।

এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগের ডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের একাধিক ঘটনার তদন্ত করে চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আগে এ ধরনের ঘটনা সদরঘাটকেন্দ্রিক ঘটলেও ইদানীং রাজধানীতে বেশ কয়েকটি চক্র তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুরে দুটি গ্রুপ ও টঙ্গীতে তিনটি স্পটে বমি পার্টির সক্রিয়তার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এরই মধ্যে একটি চক্রকে গ্রেফতারের আওতায় আনা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকিদেরকেও গ্রেফতারের আওতায় আনতে পারব।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]