রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের ‘এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ বইটির ইংরেজি সংস্করণ‘ “Bangladesh will Go a Long Way” আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বঙ্গভবনে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও প্রকাশক ওসমান গনি এবং বইটির সম্পাদনা সমন্বয়ক পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও গবেষক ড. এম আবদুল আলীম রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটি হস্তান্তর করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
বইটির মাধ্যমে পাঠক সমাজ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, পদ্মা সেতুর কাল্পনিক দুর্নীতি, সমসাময়িক রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও দিন বদলের পালাসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারবেন তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান আরো বলেন, পাঠকপ্রিয়তা পেলে তাঁর এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে এবং ভবিষ্যতে লেখালেখির জন্য আরো আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা পাবেন।
বিভিন্ন তথ্যবহুল প্রবন্ধ সমৃদ্ধ ২৩২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে বিধৃত হয়েছে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের শৈশব থেকে শুরু করে পুরো জীবনের কথা; তাঁর সংগ্রাম, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, জেলজীবন, কর্মজীবন, সংসার-জীবন, চিন্তাদর্শ তথা সবকিছুর পরিচয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন, সচিব সংযুক্ত মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান এবং অনুবাদক অধ্যাপক দুলাল আল মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
এই বইতে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিনের লেখা একুশটি কলাম ও স্মৃতিচারণমূলক লেখা, তিনটি সাক্ষাৎকার এবং তাঁর জীবন সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।
এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর দুষ্প্রাপ্য ও ঐতিহাসিক কিছু আলোকচিত্র বইটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
আগামী প্রকাশনীর সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ওসমান গনি বলেন, রাষ্ট্রপতি এই বইতে তাঁর স্মৃতিমূলক লেখা যেমন- বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ, রাজনৈতিক কর্মকান্ড, বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও দেশকে এগিয়ে নিতে তাঁর চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রকাশক ড. এম আবদুল আলীম বলেন, বইটি বিভিন্ন সময় প্রকাশিত প্রবন্ধ ও লেখার হুবহু সংকলন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিজীবন, তার সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন কর্মকান্ড সেগুলোর একটা ব্যাপক ভিত্তিক পরিচয় উঠে এসেছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহ্বানে ১৯৬৬ সালে ছাত্র-রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং তাঁর স্নেহের পরশ লাভ করেন।
১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৯৭২ সালে পাবনার নগরবাড়ি ঘাট জনসভা এবং পাবনা স্টেডিয়ামের জনসভায় পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্য শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া বইটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গৃহীত নানা পদক্ষেপ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, করোনাসঙ্কট মোকাবেলা, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন, স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিসহ বহুবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং রাষ্ট্রনেতা হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে লেখা সাতটি কলাম।
গ্রন্থের পরিশিষ্টে যুক্ত করা হয়েছে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর জীবন, ছাত্র-রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, কারাভোগ, মুক্তিযুদ্ধ, কর্মজীবন এবং রাজনৈতিক চিন্তাদর্শ সম্পর্কে গবেষক-প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আলীমের একটি অনুসন্ধানমূলক ও তথ্যসমৃদ্ধ দীর্ঘ গবেষণা-প্রবন্ধ।
মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।
তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি, জেলা বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাকশাল এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছেষট্টির ৬-দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ঐ সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে পড়ে তিন বছর জেল খাটেন এবং ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন যার ক্ষত চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীর সাংবাদিক ছিলেন। কর্মজীবনে জেলা ও দায়রা জজ, দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
চাকুরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুদক কমিশনার হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবতাবাদী, বিনয়ী ও দৃঢ়চেতা মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী। ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।