শহীদ মিনার নেই তাতে কী? তাই বলে কী ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবো না? আমরা প্রতি বছর এভাবেই অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দেই দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কথাগুলো খুব আক্ষেপের সঙ্গে বলছিলো ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চৌরঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণী শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের চৌরঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়। জনবহুল এলাকা হওয়া সত্তেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দুই যুগেও শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি অজ্ঞাত কারণে। এ কারণে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
বুধবার (২১ ফ্রেরুয়ারী) সকালে চৌরঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এমন দৃর্শ্য। ইট পাথরের তৈরী শহীদ মিনার না থাকায় কলা গাছের তৈরী অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ জামান বলেন, টাকার অভাবে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারিনি। কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি বলেছিলাম তাঁরাও শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেননি। তাই একুশে ফ্রেরুয়ারী এলে বিদ্যালয়ের মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালাউদ্দীন বলেন, শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফ্রেরুয়ারীর আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে কলাগাছের শহীদ মিনার বানানো হয়, তাতে কাগজ মুড়িয়ে সুন্দর করা হয়, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা বলে, ‘একুশে ফ্রেরুয়ারীর দিন বিদ্যালয় খুব সকালে খালি পায়ে আমরা আসি। শিক্ষকদের সাথে সহযোগিতা করে আমরা কলাগাছ দিয়া শহীদ মিনার বানায়। আমরা তাতে ফুল দেই।
নবম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আক্ষেপ করে বললো, "টিভিতে যখন দেখি বিভিন্ন স্কুলের সুন্দর শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হচ্ছে তখন খুব কষ্ট লাগে। শহরের স্কুল নয় বলেই কী আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার থাকবে না?
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বলছেন, মহান ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মদান করেছেন, তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি তাদের।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্ত শাহীন আকতার বলেন, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারে নেই তাদের নিজস্ব অর্থয়নে শহীদ মিনার করতে বলা হয়েছে।