সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নাংলা ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সব পরীক্ষার্থীই ভুয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ আছে, শিক্ষার্থী নয় এমন এবং একই ছাত্রীদের দিয়ে বার বার পরীক্ষা দিয়ে এমন জালিয়াতি করে এমপিও ছাড়সহ বোর্ড পরীক্ষা সম্পন্ন করেন প্রতিষ্ঠানের সুপার বাশার। এবারের দাখিল পরীক্ষাতেও ভুয়া পরীক্ষার্থী সাজিয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব কাজে একাধিক বার জেল ও জরিমানার পরেও থামানো যায়নি তার অপকর্ম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে এবারের দাখিল পরীক্ষায় ১৮ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দিনে ৭ জন উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় দিন (১৮ ফেব্রুয়ারি) ওই ১৮ জনের একজনও অংশ নেয়নি।
মাদরাসার শিক্ষার্থী রাখি খাতুন জানান, গত বছর ২০২৩ সালে সে দশম শ্রেণিতে পড়াকালে পাখি নামের অন্যজনের হয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বছর নিজে পরীক্ষার্থী হয়েও সে পরীক্ষা দিতে পারেনি।
রেজিস্ট্রেশনের অজুহাতে তাকে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেছে সে।
আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন জানায়, শুধু সে নয় তার মতো তাদের বান্ধবী আয়েশা, মাসুমা ও শারমিন এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। মাদরাসার সুপার পরীক্ষার কয়দিন আগে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আশা দিলেও শেষ পর্যন্ত একদিন আগে ক্ষমা চেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বলে জানান।
আফসানা মিমি ২০২৩ সালে ভর্তি হয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে জানান, বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার পর গতবছর সে নতুন করে শুরু করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রথম দিন পরীক্ষায় অংশ নিলেও দ্বিতীয় পরীক্ষায় ভয়ে অংশ নেননি তিনি।
কুলসুম নামের এক নারী জানান, তিনি ২৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তবে পরীক্ষার প্রবেশপত্র তার কাছে নেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতে থাকা প্রবেশপত্র সুপারকে দিয়ে দিতে হয়।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় সমাজ সেবক সামছুর রহমান বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে, মাদরাসার সুপার আবুল বাশারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল হামিদ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় কেউ অংশ না নেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টির সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরে শতাধিক বাল্যবিয়ে দেওয়ার অপরাধে ম্যারেজ রেজিস্টার ও মাদরাসা সুপার আবুল বাশার গ্রেপ্তার হন। এ ছাড়া চেক জালিয়াতি মামলায় বেশকিছুদিন আগে দেবহাটা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।