চলমান সংঘাতের মধ্যেই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। এদিকে মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের কাছে পরাজয়ের ঘটনায় তিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির সামরিক আদালত। এছাড়া জান্তা সরকারের সামরিক পরিষেবা আইন থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়তে শুরু করেছে হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহীদের সাথে সামরিক জান্তার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে মিয়ানমারের ৫০ শতাংশের বেশি অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সহিংসতার মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজ জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।
সেই বৈঠকে তিনি বলেন, দেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ এগিয়ে চলছে এবং তা শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ ও শহরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সামরিক আদালত।
এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি চীন সীমান্তে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে জান্তার আদালত।
রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ জানিয়েছে, রাখাইনের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মংডুর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কমান্ডাররা। বৈঠকে মুসলিম নেতাদের প্রস্তাব দেয়া হয়, যদি তারা জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেন, তাহলে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
তবে বৈঠকে উপস্থিত মুসলিম নেতাদের একটি অংশ বলেছেন, যদি তাদের সত্যিকার অর্থে মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাহলে তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবেন। তবে বেশিরভাগ নেতা এতে রাজি হননি।
এদিকে সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সামরিক পরিষেবা আইন থেকে বাঁচতে দেশটির হাজার হাজার মানুষ দেশ ছাড়ার জন্য পাসপোর্ট ও ভিসার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ভিড় করছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার পাসপোর্ট অফিসের বাইরে পদদলিত হয়ে দু'জন নিহত হন।
এর আগে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে অং সান সুচির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ৪১২ আসনের মধ্যে ৩৪৬টিতে জয় পায়। কিন্তু অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এরপর ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন ও হামলায় অন্তত সাড়ে চার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বন্দী করা হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে। জান্তা বাহিনীর নৃশংস হামলায় মিয়ানমার জুড়ে অন্তত ৭৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিসহ দেশটির একাধিক গণতন্ত্রপন্থি সংগঠন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
ভোরের পাতা/আরএস