আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি বলেছেন, চৌদ্দশ’ বছর আগে নবী করিম যেসব কথা বলে গেছেন তা আজও চলমান রয়েছে- আমাদের সমাজকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। মূলত নবী করিম সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক বলেই তার দেখানো সত্য-ন্যায় ও সুন্দরের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহর বান্দা হিসেবে, নবী মোহাম্মদের উম্মত হিসেবে- মানুষে মানুষে হানাহানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নবী করিম মোহাম্মদ(সা.) আমাদেরকে সত্য-সুন্দর ও ঈমানের পথে পরিচালিত হতে নসিহত করেছেন- আজ আমরা তা মেনে চলার অঙ্গিকার করবো।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা বলে থাকি পবিত্র কোরআন হলো আমাদের সংবিধান আর বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রীয় একটি সংবিধান আছে। পবিত্র কোরআনে আমাদের জীবনবিধান লেখা আছে, দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা লিপিবদ্ধ আছে। আমরা কোরআন পড়িনা আর পড়লেও তা বোঝার চেষ্টা করিনা। এ থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদেরকে জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে- কোরআনের জীবনবিধান জানতে হবে। তিনি শনিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে কালিহাতী উপজেলার বল্লা মাদরাসা মোহাম্মদীয়ার(ফাজিল মাদরাসা) ৫১তম বার্ষিক ইসলামী জলসায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের কমান্ডর ইন চীফ লতিফ সিদ্দিকী বলেন- কিছু দুষ্টলোক আমার সম্মানহানি করেছিল, আমার ৬৫ বছরের রাজনীতি-অর্জন সব ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু কালিহাতীর মানুষ তা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি কালিহাতীর মানুষকে ভালোবেসেছি, মানুষও আমাকে ভালোবেসেছে।
দুদিন ব্যাপী ইসলামী জলসার সমাপনী দিনে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি মৃত্যুকে খুব ভালোবাসি- মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সব সময় প্রস্তুত আছি। মহান আল্লাহকে আমি বলেছি- যতদিন জীবিত রাখো আমাকে সচল রেখো। মহান আল্লাহ আমাকে যে ভালোবাসেন- এটা কিন্তু আমি বুঝি। তাই ৮৫ বছরেও আমাকে সচল রেখেছেন।
তিনি বলেন, আজকাল যেখানে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখি। এটা ভালো- কিন্তু একই সঙ্গে শিশু-কিশোর, বালক-বালিকাদের সুশিক্ষায় গড়ে তুলতেও হবে। পরীক্ষায় যারা নকল করে, আমি তাদের চরম শত্রু। আমাকে কোনো লোভ-মোহ, ভয়-ভীতি স্পর্শ করেনা। তাই আমাকে কেউ ভয় দেখাবেন না, আমাকে কেউ লোভ দেখাবেন না। আমি আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত। আমি আওয়ামীলীগের কেউ না। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, শেখ হাসিনারও সৈনিক। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কিছু চাইলে ফিরিয়ে দেবেন- এটা আমি বিশ্বাস করিনা।
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সভাপতি শাইখ ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফীর সভাপতিত্বে এদিন পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সেক্রেটারী জেনারেল শাইখ ডক্টর মুহা. শহিদুল্লাহ খান মাদানী, ভারতের দিল্লীর ইসলামী চিন্তাবিদ শাইখ তানভীরুল আলম চতুর্বেদী, ঢাকার সারেন্ডার্ড ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট মাদরাসার অধ্যক্ষ শাইখ কাজী এএম ইউসুফ জাহান এবং জয়পুর হাটের ইসলামী বক্তা শাইখ আব্দুল মুক্তাদির বিন জাহাঙ্গীর।
দুই দিনব্যাপী ইসলামী জলসা পরিচালনা করেন, মাদরাসা দারুল ইসলাম মোহাম্মদীয়ার(ফাজিল মাদরাসা) অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। এছাড়া দেশ-বিদেশের ইসলামী বক্তা এবং স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার ইমাম ও খতিবরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ওই ইসলামী জলসায় দারুল ইসলাম শিল্পী গোষ্ঠী ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ইসলামী জলসায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে পৃথক শামিয়ানায় মহিলাদের ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা করা হয়।