রোববার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪ পৌষ ১৪৩১

শিরোনাম: সংস্কারের বিষয়ে সরকার একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ   সচিবালয়ে প্রবেশ পাসের আবেদন নিতে অস্থায়ী সেল গঠন   স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ ও বিচারপতি নিয়োগ কাউন্সিল গঠন দ্বারপ্রান্তে: সুপ্রিম কোর্ট   দেউলিয়ার পথে থাকা ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে: গভর্নর   পুলিশ এখনো থানায় টাকা খাচ্ছে : সারজিস   অর্থপাচার কমে গেছে, রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়নের ওপরে: গভর্নর   ভারতে নো এন্ট্রি ফর বাংলাদেশি: ফ্যাক্ট চেক যা বলছে   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
চালু হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী-মুর্শিদাবাদ নৌপথ
উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:৪০ এএম | অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ময়া নামক এলাকায় দীর্ঘ ৫৯ বছর আগে চালু থাকা নৌপথ আবারও আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারী  সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। 

এ নৌবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফাসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারাবৃন্দ। 

জনা গেছেঃ ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগপর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল ব্যবসা-বাণিজ্য কাার্যক্রম চালু ছিল। এরপর থেকে এই রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় নৌবন্দরটি আবারো চালু হতে যাচ্ছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুলতানগঞ্জ নদী-বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। উদ্বোধনের পর রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পাবে।

উদ্বোধনের পর সুলতানগঞ্জ নদী বন্দরের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ময়া ঘাট বা নদী বন্দরের মধ্যে আর্ন্তজাতিকমানের বাণিজ্য শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। এই পথে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে বিপুল পরিমান অর্থের বাণিজ্য হবে। এই রুটটি চালুর বিষয়ে বেশ সচেষ্টআন্তরিক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি ২০২০ সালে একবার উদ্যোগও নিয়েছিলেন চালুর। কিন্তু করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে তার ইশতেহারে সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের ময়া পর্যন্ত নৌরুট চালুর প্রতিশ্রুতি ছিল। নৌ-রুট চালুর মধ্য দিয়ে তাঁর ইশতেহার বাস্তবায়িত হলো।

সূত্র জানায়, এর আগে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য কার্যক্রম চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যতা সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথ দিয়ে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী আনা হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। বেশ জোরেসোরে চলছে কাজ। পণ্য আনা নেওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাস্ত। পল্টুনও তৈরি রাখা হয়েছে, চলছে রঙের কাজ। পাশেই রাখা হয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ট্রলার। এই ট্রলার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতে পণ্য পাঠানো হবে। নৌবন্দর ঘাটের পাশে রাখা আছে সারি সারি ইট। পলি মাটিতে এই ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হবে। এ সব কাজের তদারকি করছিলেন বিআইডব্লিউটিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা খুব দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। তাদের এই কাজ শনিবারে শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের পর নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয় বিশাল প্রজেক্ট ঘোষণা করবে। এখানকার জমি অধিগ্রহণ করা হবে এবং সরাসরি জাতীয় সড়কে উঠবে। অনুসন্ধানে  জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, এখানে নৌবন্দর চালু হলে স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যা আমাদের জন্য হবে ইতিবাচক। এক সময় এখানে নৌবন্দর ছিল তা পরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের ছয় বছর আগে এই বন্দর বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিশাল বিশাল জাহাজ আসতো এখানে। পানিতেও ভরে থাকতো সারাক্ষণ। তিনি আরও বলেন, সুলতানগঞ্জ ঘাটের পশ্চিম দিকে বিশাল জায়গা আছে সেখানে এই বন্দরটি করলে আরও ভালো হতো। সেখানে সরকারি জায়গাও পড়ে আছে। আর কিছুদূরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শুরু। সেখান থেকে সরাসরি সড়কে ওঠা যাবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর ও খনিজ বালুর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যমুনা রেলসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে ঝাড়খন্ডের পাকুর ব্র্যান্ডের পাথর; যা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। তবে সড়ক পথে এসব পণ্য আমদানিতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি খরচ বেশি পড়ে। নৌপথে এসব পণ্য আমদানি করা গেলে পরিবহণ খরচ বহুলাংশে কম পড়বে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুু সাঈদ  বলেন, বন্দর চালু হলে গোদাগাড়ী থেকে লালগোলা ময়া নামক এলাকায় সংযুক্ত হবে। 

তিনি আরও বলেন ২০১৩ সাল থেকে এ বন্দরটি চালু করার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের যোগাযোগ করি, পরে ২০১৫ সালে আবেদন করা হয়। ২০২০ সালে ২০ শে মে ভারত বাংলাদেশের নৌ বন্দর হিসাবে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মনোজক্রান্তি বড়াল ও ভারতের পক্ষে সাবেক রাষ্ট্রদ্রুত রিভাগাংগুলি দাস উপস্থিত ছিলেন। 

সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে কম খরচে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য শুরু হবে। ফলে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন। 

উল্লেখ্য, পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পদ্মায় সারা বছর নৌ চলাচল উপযোগী পানি থাকে। বিপরীতে ভারতের ময়া বন্দরটিতেও সারা বছর পানি থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার মধ্যখানে কিছু পথে নাব্যতা কমে যায়। তবে তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পদ্মায় ড্রেজিং করে নৌপথটি সারাবছর সচল রাখা হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ময়া থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আসতে পণ্যবাহী নৌযান মাত্র এক ঘণ্টায় আসতে পারবে। 

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী, পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত এই নৌরুটটি। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর আগে থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখা-লেখি বা ডিও লেটার দেওয়ার কাজ করেছি। এর ফলে এটা গতিশীল হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ উভয়পক্ষ-বিশেষ করে ভারত নৌপথে বাণিজ্য করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের সাতটি প্রদেশ আছে। সেগুলোতে সুলভে মালামাল পৌঁছে দিতে তারা নৌপথে বাণিজ্য করতে চায়। তিনি আরো বলেন, ভারতের পক্ষ মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, ময়া নৌবন্দর সম্পন্ন প্রস্তুত করে রেখেছে। সুলতানগঞ্জে একটি পল্টুন নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। পাঁচটি নৌযানের মধ্যেমে ট্রায়াল দেওয়া হবে।

পর্যায়ক্রমে নদীর নাব্যতা ড্রেজিঙের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হবে। রাজশাহীর পশ্চিমে একটি নৌবন্দর হতে যাচ্ছে। যেটির খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে। নদী ড্রেজিং হচ্ছে আরিচাতেও। আরিচা থেকে উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে আসামের নৌবন্দরে মালামাল নিয়ে যেতে পারবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]