প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৯:৪৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে চলছে গোলাগুলি, গুলি বর্ষণ, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার হামলা।
তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দেখলে নেয়ার পর থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা মরিয়া উঠেছে ঘুমধুম সীমান্তের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প দখলে নিতে। যার কারণে একের পর এক জান্তা বাহিনীদের সদস্যদের উপর হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহী গ্রুপটি। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরাও। কিন্তু বিদ্রোহীদের সাথে ঠিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প ছেড়ে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর আরো ১১৩ জন সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে ২২৯ জন সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিজিবি ক্যাম্পে।
এদিকে মর্টারশেল ও রকেট লাঞ্চার এর বিষ্ফোরিত অংশ এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী বসত ঘরের উপর। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বাংলাদেশী নাগরিক আহত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ঘর-বাড়ী, ফসলি জমি ও ক্ষেত খামার। আতংক, উৎকণ্ঠায় নিজের ঘর বাড়ী, দোকানপাট ছেড়ে নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, যারা এখনো ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নিতে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ জানান, সীমান্তে বাংলাদেশীরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। নিরাপত্তার কারণে সীমান্তবর্তী ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে মঙ্গলবার সকালে পরিদর্শনে যান বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা ভয় ও আতংকে আছে। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। যারা এখনো ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নিতে ঘুমধুম এলাকার ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ সীমান্তে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েনসহ প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে চলমান গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু'সহ আশপাশের এলাকাগুলো। সর্বশেষ জলপাইতলী গ্রামে মর্টারশেলের বিষ্ফোরিত অংশের আঘাতে বাংলাদেশী নারী আসমা খাতুন (৫৫)'সহ এক রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর আগে মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে রোববার বাংলাদেশী নাগরিক রবীন্দ্র ধর ও রহিমা বেগম দুজন আহত হয়। আগের দিন মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে সিএনজি অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে যায় এবং সীমান্তবর্তী বহুঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মর্টারশেলের গোলার আঘাতে সীমান্ত জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জন শূন্য হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকা।