মো. মহিদুল ইসলাম, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৯:৩৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে কৃষানীর মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিত বঙ্গ বুকুটিয়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী ফাতেমা (৪০) তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক এর স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য সহকারী চাকুরীর পাশাপাশি অবসর সময় একজন সফল কৃষানী। রবি মৌসুম এলেই তিনি চিন্তা করেন বিরল জাতীয় কিছু চাষাবাদ করার।
উপজেলায় এ বছরই প্রথম এই রঙিন ফুলকপি চাষ করে তাক লাগিয়েছেন কৃষানী ফাতেমা। এক ছেলে এক মেয়ের সুখী পরিবার স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকুরিজীবী, স্বামী মতিয়ার রহমান ছুটির দিনগুলো কাটান সবজি বাগানে। এ বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ৩৩ শতাংশ পতিত জমিতে রঙ্গিন ফুল কপি চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার জমিতে হলুদ, বেগুনি, সাদা রংয়ের ফুলকপি দেখতে প্রতিদিনই মানুষ আসছেন। রং বেরংয়ের ফুল কপি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। রঙ্গিন কপি চাষাবাদে লাভবান হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এখানকার অনেক কৃষাণী, কৃষকরা। ৩৩ শতাংশ জমিতে এই প্রথম চাষ করেছেন হলুদ, বেগুনীসহ সাদা রংয়ের ফুলকপি। ফলন আসা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। চারা রোপনের ৮৫ দিনের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছে রঙ্গিন এ ফুলকপি। সকল খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হবে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। এই কপি চাষে রাসায়নিক সার ও ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করায় এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এলাকাতে নতুন ফসল হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই এটার চাহিদা অনেক বেশি। এ ফুলকপি গুলো তার জমি থেকেই বেশির ভাগ বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করছেন। আগামীতে এখানকার অনেক কৃষক অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বাহারী রংয়ের ফুলকপি চাষ করবেন বলে ইচ্ছা পোষন করছেন। রঙ্গিন ফুল কপির বীজ পাওয়াটা সহজলভ্য হলে আগামীতে এর চাষাবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, ফাতেমা একজন স্বাস্থ্য সহকারী হলেও তার নিজের জমিতে সব সময় উন্নত জাতের উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করতে আগ্রহী। গত বছর এ জমি পতিত ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, এই বিষয়টিকে সামনে রেখে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরন প্রকল্পের আওতায় রঙিন ফুলকপির চারা, জৈব সার, রাসায়নিক সার প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ বছরই তিনি প্রথমবারের মত আবাদ করেছেন হলুদ আর বেগুনী রংয়ের ফুলকপি। অন্যান্য ফুল কপির তুলনায় এগুলো কালারফুল হওয়াতে মানুষের কাছে খুব আকর্ষনী এবং বাজারে এর চাহিদাও খুব বেশি। এ ফুলকপি পুষ্টিগুন ও মানসম্মত হওয়ায় এখানকার কৃষকরা রঙিন ফুলকপি চাষাবাদে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমরা আশা করছি আগামী রবি মৌসুমে এর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। হলুদ ও বেগুনী রংয়ের ফুলকপিতে বিটা ক্যারোটিন থাকে তা চোখ এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, নাগরপুরে উচ্চমূল্যের ফসল বিশেষ করে, রঙিন ফুলকপি চাষ এবং জৈব পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজি চাষ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এতে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ নাগরপুর একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলাফল নাগরপুরবাসী ইতিমধ্যে উপভোগ করছে। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।