বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে আসরের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে রংপুর রাইডার্স। আগে ব্যাট করতে নেমে বেনি হাওয়েলের ব্যাটিং দৃঢতায় ৮ উইকেট হারিয়ে ১২০ রানের পুঁজি পায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুশমন্থ হেমন্থের স্পিন ঘূর্ণিতে মাত্র ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় চলে যায় রংপুর। তবে বাবর আজমের নান্দনিক ফিফটি এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১০ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় রংপুর।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স। পাওয়ার প্লেতে রান তোলার বদলে তারা হারিয়েছে একের পর এক উইকেট। ৬ ওভারে ৩৫ রান তুলতেই সিলেট হারায় ৩ উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শেখ মেহেদীর স্পিনে পরাস্ত হন ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুন। এগিয়ে এসে ফ্লিক করার চেষ্টায় ব্যর্থ মিঠুন, বলের লাইন মিস করে হয়েছেন স্ট্যাম্পড।
সবাইকে চমকে দিয়ে তিনে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক মাশরাফী। যদিও উইকেট বেশিক্ষণ কাটাতে পারেননি তিনি। দৌড়ে এক নিতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটের শিকার। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে মাশরাফি ৭ বলে করে যান ৬ রান। নতুন ব্যাটার ইয়াসির আলি এসেই দাপট দেখানোর চেষ্টা করেন। ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারিতে ইনিংসের শুরু করা ইয়াসিরও দ্রুতই বিদায় নেন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মেহেদী আসেন নিজের তৃতীয় ওভার শেষ করতে। প্রথম বলেই ইয়াসিরকে ক্যাচ বানান মোহাম্মদ নবীর হাতে। দারুণ শুরু করেও ইয়াসির আলি থামেন ৯ রানে।
ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে একা দাঁড়িয়ে থাকেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। এর মাঝেই জাকির হাসানের পতন। আগের ম্যাচে তিনে নেমে জাকির খেলেন হার-না-মানা ৭০ রানের ইনিংস। আজ পাঁচে নেমে করেন কেবল এক রান। জাকিরকে দ্রুত ফেরাতে অবদান রাখেন রংপুরের আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী।
৩৯ রান ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা সিলেট স্ট্রাইকার্স, তখনই ত্রানকর্তা হয়ে মিরপুরের গ্যালারি মাতান দুই বিদেশী বেন কাটিং ও বেনি হাওয়েল। আস্থার সঙ্গে ব্যাট করেন। বোলারদের জেঁকে বসতে না দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। তাদের ব্যাটে চড়েই দলের সংগ্রহ শতরান ছাড়িয়ে যায় সিলেটের। বাউন্ডারির চাহিদায় শেষপর্যন্ত ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয় ৩১ রানে থাকা বেন কাটিংকে। আর তাতেই ভাঙে ৫৬ বলে সাজানো তাদের ৬৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
শেষ ওভারে গিয়ে বেনি হাওয়েল বিদায় নেন রিপন মন্ডলের শিকার হয়ে। ৩৬ বলে তার ৪৩ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ১ ছক্কায়। বাবর আজম ডিপ মিড উইকেট এরিয়া থেকে ডিরেক্ট থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে সাজঘরে ফেরান ১ রানে থাকা রিচার্ড এনগারাভা। শেষপর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে সিলেটের ইনিংস থামে ১২০ রানে। রংপুরের হয়ে মাহেদী হাসান ও রিপন মণ্ডল নেন ২টি করে উইকেট। এছাড়াও ১টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী ও হাসান মুরাদ।
১২১ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নামেন দুই ওপেনার বাবর আজম ও রনি তালুকদার। বাবরকে পেয়ে জুটি গড়ার বদলে রনি উইকেট হারিয়েছেন দ্রুত, ৭ বল খেলে করেন ৬। তিনে নামা ব্রেন্ডন কিং শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই কিংকে বোল্ড করে নাগিন উদযাপনে মাতেন নাজমুল হাসান অপু।
ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। দুর্দান্ত ফ্লিকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিলেও এক বল পরই ক্যাচ তোলেন সোহান। ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে সহজেই সোহানের হাওয়ায় ভাসানো বল লুফে নেন বেন কাটিং। ৩৩ রানে তিন উইকেট হারানো রংপুরের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়ে যান শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
দুশান হেমন্থের স্পিন বিষে একে একে নীল হন শামীম পাটোয়ারী, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ নবী। চার বলের ব্যবধানে তিনজনকেই হেমন্থ ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। দুইবার রিভিউ নিয়ে সফল হন সিলেটের দলনেতা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আর মোহাম্মদ নবীও রিভিউ নিয়েও তার উইকেট বাঁচাতে পারেননি।
স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই রংপু রাইডার্সের। কিন্তু একা দাঁড়িয়ে নিজের লড়াই চালিয়ে যান বাবর আজম। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে রংপুরের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন বাবর। ব্যাটিং দৃঢতায় মিরপুরের সব আলো নিজের করে নেন। সিলেটের বোলারদের জেঁকে বসতে না দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন। হেমন্থও এরপর আর উইকেটের দেখা পাননি। প্রথম ওভারে পাওয়া তিন উইকেট নিয়েই তাকে শেষ করতে হয় বোলিং কোটা। ৪ ওভারে হেমন্থ দিলেন মাত্র ২০ রান, উইকেট নেন ৩টি।
বাবর আজমকে অবশ্য এরপর একা লড়াই করতে হয়নি। তাকে এসে দারুণভাবে সঙ্গ দেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। দু’জনের অবিচ্ছিন্ন ৮৬ রানের জুটিতে ম্যাচ জিতে রংপুর। ৪৯ বলে ছয়টি চারে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন বাবর। সঙ্গী ওমরজাই ৩৫ বলে তিনটি ছক্কা ও দুটি চারে করেন ৪৭ রান।