গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা ও দহবন্দ ইউনিয়নের উত্তর ধুমাইটারী মৌজাস্থ তিস্তানদী ভাঙ্গণের ফলে সুরক্ষার ৪৬ পরিবার এখন অরক্ষিত প্রায়।
জানা যায়, নদীভাঙ্গণে বাস্তুচ্যুত হলে ২০০৮ সালে 'আমাদের ঠিকানা গুচ্ছগ্রাম' নামে যৌথ বসবাসেরর জন্য আবাসস্থলে এসব পরিবার প্রতি ৫ শতক পরিমাণ জমিসহ বসবাসযোগ্য গৃহ প্রদান করা হয়। তাঁদের সু-রক্ষায় মেলেনি স্থায়ী কর্ম-কর্মস্থল। গৃহীত হয়নি বাস্তুচ্যুত এসব জনগোষ্ঠির জন্য টেকসই কর্ম-পরিকল্পিত জীবিকার্জনের ব্যবস্থা। এমনকি, স্থানীয়ভাবে দুর্যোগ মোকাবেলায় কোন সহযোগিতা মিলছেনা এঁদের ভাগ্যে। কোন প্রকার ত্রাণসামগ্রী তো দূরের কথা প্রচণ্ড শীতেও মেলেনা শীতবস্ত্র।
বৈদেশিক দাতা সংস্থার প্রদেয়ার্থে বে-সরকারী সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'সমকাল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা' কর্তৃক পশ্চিম বেলকা ও উত্তর ধুমাইটারী মৌজাস্থ তিস্তানদীর চরে বাস্তবায়িত হয় 'আমাদের ঠিকানা গুচ্ছগ্রাম' মোট ২ একর ৪৩ শতক জমি উঁচু করে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার পর থেকে আর মেরামত না করায় ঘরগুলোতে বসবাস অনুপযোগী হয়েছে। এসব পরিবারের (নারীদের) নামে বারান্দাসহ এক কামরা বিশিষ্ট আধাপাকা গৃহসহ জমির দলিল করে দেয়া হলেও অদ্যাবধি কেউই পায়নি সে দলিলপত্র।
বসবাসের এক কক্ষের আধাপাকা বিল্ডিং, বারান্দা, রান্নাঘর, কয়েকটি করে পরিবারের জন্য রয়েছে গোসলখানা, আলাদাভাবে নলকূপ, টয়লেট, গোয়ালঘর, শিশু শিক্ষার জন্য ৩ কক্ষ বিশিষ্ট আলাদা গৃহ ছাড়াও সুবিধাভোগীদের সালিস-বৈঠক বা যৌথ সভাকক্ষ।
এসব কথা জানিয়ে ৩ নম্বর ক্লাষ্টারের ৮ নম্বর ঘরে বাস করেন শাহিনুর বেগম-আক্তারুল ইসলাম দম্পত্তি, একই ক্লাষ্টারের ১ নম্বর ঘরে নাছিমা বেগম-আলম মিয়া, ১১ নম্বরে আনিছা বেগম-আব্দুল হামিদ, ২ নম্বর ক্লাষ্টারের ১০ নম্বর ঘরে আলেমা বেগম-আমজাদ হোসেন, ৪ নম্বর ক্লাষ্টারের ৩ সম্বর ঘরে শাহিদা বেগম-মোমিন মিয়াসহ অনেকেই আরো বলেন, প্রত্যেকটি ঘরের ছাউনীর টিন বিনষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ও শীতে গাছের পাতা থেকে টপ-টপ করে পানি পড়ে। টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী, নেই যাতায়াতের রাস্তা, বন্যায় বসতবাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের অধিকাংশই পানি ও কাদায় নিমজ্জিত থাকে। হাট-বাজার করতে হলে হাটু পেরিয়ে কখনো কখনো গলা পানি সাঁতরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। পৃথক ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত এ চরে করোনাসহ বন্যায় কোন প্রকার সহযোগিতা বা যে কোন দুর্যোগে ত্রাণ সামগ্রীও তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি। এর পাশ দিয়ে বহমান তিস্তার শাখানদী। ফলে চলমান শীতের প্রকোপ তাঁদের কাছে অনেকটাই বেশি হওয়ায় খড়কুটোতে আগুনের তাপ পোয়ানোই তাঁদের শীত নিবারণের একমাত্র ভরসা। চরম দুর্দিনে দিনাতিপাত করতে থাকা এসব মানুষের কয়েকজন জীবিকার্জনের জন্য অবলম্বন হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। কেউ স্থানীয়ভাবে আবার কেউ চলে গেছেন অন্যস্থানে।
এ ব্যাপারে বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ বলেন, সমকাল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার গুচ্ছগ্রাম আছে। সেটা ধুমাইটারীতে। দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম সরকার রেজা জানান, এটা বেলকা ইউনিয়নের মধ্যে।
বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা আর দহবন্দ ইউনিয়নের উত্তর ধুমাইটারী স্থানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় চলছে ২ ইউনিয়ন মধ্যকার অবহেলিত এসব পরিবারে জনসমষ্টি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম এসব দুর্গত পরিবারে প্রতি সু-দৃষ্টিদানের আশ্বাস প্রদান করে বলেন, আগে কেউই বিষয়টি জানায়নি। এ প্রথম জানতে পেলাম।