আর এক সপ্তাহ পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটাভুটি। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের মিত্রগণ এবার নির্বাচন বর্জন করায় ভোট নিয়ে কিছুটা সংশ্রয় ও সংকট আছে বলে মনে করেন খোদ নির্বাচন কর্মকতারাই।
তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্যরা সারাদেশে জোরদার টহল শুরু করেছে। নির্বাচন কার্যে যুক্ত বিচারকদেরও দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের ছক অনুসারে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আগে থেকেই আইনশৃংখলা বাহিনী নিরাপত্ত চকি বসিয়েছে। করা হচ্ছে দেহ তল্লাশী। এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে কঠিন প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা প্রায় সবকটি আসনেই নৌকা ও নাঙ্গলকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ফেলতে পারেন। তাই সকল প্রার্থীই শেষ মুর্হুতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জমজমাট লড়াই হলেও সুযোগ নিতে পারে লাঙ্গল। কারণ তারাও সারাক্ষণ সংসদীয় আসনগুলোতে ভোটের প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। সব মিলিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আর আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের খবরে নির্বাচন নিয়ে আশাজাগানিয়া পরিবেশ বিরাজ করছে। গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে ‘নৌকার’ প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে একই দিনে দলীয় ৩ হাজার ৩শ ৬২জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন আসনে ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা অনেক আসনে ‘ডামি’ প্রার্থীদের দাঁড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেন। যাকে ‘সবুজ সংকেত’ মেনে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গরম করতে শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা। ওই সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হতে না পারে। সে ক্ষেত্রে একাধিক ডামি প্রার্থী রাখতে মত দেন দলীয় প্রধান।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশল। তবে দলের ভেতরেই আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নৌকার’ প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলীয় সূত্র বলছে, যার জন্য এক ধরনের সবুজ সংকেত ছিল দলের। বিষয়টিকে ‘গলার কাঁটা’ বলে মনে করছেন ‘নৌকার’ প্রার্থীরা। তবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার কোন আভাস মিলছে না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে। বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল বলেই উল্লেখ করছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এবার ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ৪২৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরপরও ৩২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্যদেরও অনেকে আছেন।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশলে ক্ষুদ্ধ হয়েছে ক্ষমতাশীন দলের শরিকরাও। কারণ শরিকদের আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়ে গেছে। আর তাদের পাশ করার সম্ভবনাও বেশি। ১৪ দলের নেতাদের এর পরই মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি ১৪ দলীয় জোটের জোট নেত্রী শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছেন বলে জোটের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তবে জোট নেত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে থাকার পক্ষেই মত দিয়েছেন বলে ১৪ দলের শরিক কয়েকজন এর আগে জানিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে,কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা নেই। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সারা দেশেই আছে। তবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, পিরোজপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভেতরে-ভেতরে উৎসাহ, সহায়তা দিচ্ছেন।বিভিন্ন আসনে নৌকা কিংবা লাঙ্গল থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবস্থান বেশ ভালো। এ কারণে আশা করা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ের পাল্লা বাড়ছেই।
তবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তার জেতার অধিকার আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি জনগণের ভোটে জিতে যায়, সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, নির্বাচন হবে ফেয়ার প্রতিযোগিতামূলক, এখানে কোনো মারামারি সংঘাত নেই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিএনপি। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা মরণ কামড় দিতে চায়। যারা নির্বাচনমুখী তাদের নিয়ে বিরোধীদের নাশকতা প্রতিহত করা হবে।