ড. কাজী এরতেজা হাসান
দেশের মানুষ দেখেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি অপশাসন। কিভাবে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন না করে গড়ে তোলা হয়েছে নব্য ধনীক শ্রেণি। ‘মানি ইজ নো প্রোবেল’ এই কথা আওড়িয়ে বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ এনে তা লুটপাট করা হয়েছে। দেশের অসহায় দরিদ্র মানুষের কথা বলে এসব টাকা এনে তা ক্ষমতাসীনেরা সে অর্থে ভোগ-বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছে, আর গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, স্বাধীনা বিরোধী শক্তি নির্মমভাবে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের মধ্যতিয়ে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী যে ঘাতক জামায়াতে ইসলামীকে জাতির পিতা নিষিদ্ধ করেছিলেন, অবৈধ সেনা শাসক জিয়া এসে, সেই জামায়াতে ইসলামীবে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। বিএনপি-জামায়াত রাজনীতিতে বিষফোঁড়া হয়ে উঠে, দেশকে শুধু হতশ্রীই করে তোলেন, পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দেশের মানুষের ধিকৃত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি সহ সর্বক্ষেতে দগদগে ঘার সৃষ্টি করেছে। সবকিছুর যেমন একটি অবসান আছে, তেমনই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াতও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়েছে। কিন্তু দেশকে যেভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছে, তা, সারিয়ে তুলতে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতির সোপান স্পর্শ করতে পেরেছে। বিদেশিদের চোখে বাংলাদেশ আজ আর আগের জঙ্গিবাদ, নিঃস্ব, দরিদ্র বাংলাদেশ হিসেবে ধরা পড়ে না। বিদেশিদের চোখে বিস্ময় হলো কিভাবে শেখ হাসিনা, বাংলাদেশে এত উন্নতির জোয়ার বইয়ে দিতে পারলেন।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশি-বিদেশি সবারই দৃষ্টি রয়েছে এ নির্বাচন কেমন হয়। কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। বর্তমানে সারা দেশ নির্বাচনি আমেজের ওপরে ভাসছে। পথে-প্রান্তে নির্বাচনি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। তরুণরা ব্যাপক হারে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে। বলা চলে নির্বাচন জমজমাট রূপ ধারণ করেছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রতি সবার মনোযোগ ও দৃষ্টি। থাকাটাই স্বাভাবিক। বিগত নির্বাচনগুলিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এবারও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। নির্বাচনি ইশতেহার অনুষ্ঠানে খোদ গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে ইশতেহারের চম্বুক অংশ সবাই শোনান। উল্লেখ্য যে, ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের অর্জন এবং আগামী মেয়াদে ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নে তাদের কর্মপরিকল্পননা তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের শাসনামলকে ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ’ বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ক-টি নিয়ে আলোচনা করেছি। স্বল্প পরিসরে হলেও তা পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। আজ সেগুলো হলো ইশতেহারে অগ্রধিকারপ্রাপ্ত ‘লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।’ আমি আলোচনা করবো।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষিনির্ভর। যদিও শুধু কৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল না থেকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়ে এবার ইশেতেহারে অগ্রধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা সত্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ্যত কৃষির ওপর নির্ভর। ব্যাপক জনগোষ্ঠী কৃষিতে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, বর্তমান সরকারের আগের সরকারগুলো কৃষিনির্ভর বাংলাদেশকে লাভজনক কৃষিতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়নি। সম্বনিত কৃষি ব্যবস্থতা গড়ে তোলা এবং যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি চিন্তা করে দেখেনি। আসলে এটা তো তারা করেই নি, অন্যদিকে দেশকে শিল্পোন্নত করার দিকেও দৃষ্টি দেয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। তাই তিনি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যে কৃষি তথা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা ও উৎসাহদানের বিষয়টি কোনওমতেই এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। পোশাক শিল্প রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে চাঙা রেখেছে, অন্যদিকে বর্তমানে নানা কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমেও অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে গতিশীল করে তুলেছে।
কৃষিকে লাভজনক করে তুলতে হলে একে আধুনিক যান্ত্রিকের আওতায় আনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উপযোগী করে তুলে তা বিদেশে ব্যাপকভিত্তিতে রপ্তানি সম্ভব। ইতোমধ্যে অবশ্য এর কিছুটা শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচনি ইশতেহারে এটি অগ্রধিকার দেওয়ায় এবং কৃষিতে বিনিয়োগও যে বড় একটি বিষয় তা ভুলে গেলে চলবে না। এ ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংক কৃষকদের ঋণ দিয়ে এক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কবে এ সাহায্য আরো বাড়াতে হবে। দুঃখজনক হলো, বিত্তশালী ব্যক্তিরা মোটা অংকের ঋণ নিয়ে সময়মতো তা পরিশোধ না করলেও ব্যাংকগুলো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হয় না, প্রায় সময় ঋণশোধের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে কৃষকরা কৃষ্ঋিণ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে ফেরত দিতে না পারলে তাদের কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে আমরা মনে করি, বিষয়টি ঠিক নয়। এতে দায়িত্বশীলরা কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেবেন বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সরকারের আমলে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন উন্নত যোগাযোযোগ অবকাঠামোর আওতায় চলে এসেছে, পাশাপাশি দেশের মানুষ শতভাগ বিদ্যুায়নের অধীনেও এসেছে। এ দুটি বিষয় কিন্তু লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে আমি মনে করি। কেউ যদি গ্রাম ঘুরে আসেন, যেদখবেন আগের দিনের মতো বলদ বা গরু দিয়ে চাষাবাদ করা হয়। আধুনিক ট্রাক্টর যুক্ত হয়েছে। অধিক উৎপাদনে জন্য যন্ত্রপাতিনির্ভরকৃষি আমাদের কাক্সিক্ষত কৃষির উৎকর্ষ সাধনের কাছে নিয়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
আমাদের নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিই বলে দেয়, কৃষির গুরুত্ব। যে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়, আর ক্রেতাদের নাভিশ্বাস তৈরি হয়। চিনির দাম আকাশ ছুঁয়ে যায়। চাউলের দামও চড়া, শাক-সবজির নাগালের বাইরে। ফলে আমি মনে করি আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহারে লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অগ্রধিকার ও অঙ্গিকার করে, আগামী দিনগুলোতে কৃষি অর্থনীতিকে যখার্খ জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। এতে সবার জন্য ভালো হবে। আমরা মনে করি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে ইশতেহারে অগ্রধিকারপ্রাপ্ত প্রত্যেকটি বিষয় বাস্তবায়ন করা হবে। এতে বিগতদিনের মতোই সফল করে তোলা হবে।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম;
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ;
সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই;
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।