ড. কাজী এরতেজা হাসান
অতিসম্প্রতি তরুণদের নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি যখন সরকারে আসলাম, এসে দেখলাম, সরকারি অফিসে কমপিউটার সহ এর সব সরঞ্জামই আছে, কিন্তু তা ব্যবহার করার গরজ দেখা যায়নি। আমি উদ্যোগ নিমাল সরকারি অফিসকে ডিজিটালের আওতায় আনতে হবে। কমপিউার ব্যবহার করতে হবে। আমি যখন প্রথম সরকারে আসলাম, তখন একটি মাত্র কোম্পানিকে মোবাইলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এক লাখ ২০ হাজার টাকায় মোবাইল কিনতে হত। প্রতি মিনিটের জন্য দশ টাকা কাটত, ফোন ধরলেও দশ টাকা যেত। এ অবস্থা বদলে দিলাম উš§ুক্ত করে দিলাম মোবাইল। অনেকেই কোম্পানি মোবাইলের লাইসেন্স পেল। গ্রামে গিয়ে দেখি পথে ঘাটে মানুষের হাতে মোবাইল। ত্রি-জি, ফোর-জি চলে এসেছে। তরুণদের এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই তরুণরা সমবেত হয়েছিল। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিভিন্ন তরুণের প্রশ্নের উত্তর দেন। যে কেউ চাইলে ইউটিবে এটি দেখতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এবারের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনসহ ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগ যে ১১টি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে তার প্রত্যেকটিই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনার দাবি রাখে। আমি এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। ‘আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা’ প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছে, আজ এটা নিয়ে আলোচনা করবো।
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার আধুৃনিক মনস্ক একটি দল। পশ্চাদপদ কোনও দল নয়। গোটা বিশ্বই এগিয়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে নেই। তাই বাংলাদেশও স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য নানা উদ্যোগের বিষয়টি প্রনিধানযোগ্য।
টানা ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্টিত থেকে বাংলাদেশের এমন কোনও স্তর নেই, যার উন্নয়ন-অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে করেনি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়ন করেছে। ফলে আমাদের সামনে যে বাংলাদেশকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই অবদান।
ঘোষিত ইশতেহারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে- আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ যে কতটা মনোযোগের দাবি রাখে তা অল্প কথায় কাউকে বুঝিয়ে বলাও মুশকিল। সংক্ষেপ একটি কথা বলা যায়, বিশ্বের যেসব দেশের তথ্য-প্রযুক্তিজ্ঞান দেখে আমরা শিহরিত ও আন্দোলিত হই, তাদের প্রশংসায় হয়ে উঠি পঞ্চমুখ। তারা যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে, তা, নিয়ে কারোর কোনও দ্বিমত আছে বলে মনে করি না। বর্তমান বিশ্বেই যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে, তারা, অর্থনৈতিকভাবে এবং মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটনো থেকে অনেক পশ্চাতে রয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরে লালন করছেন, তা, দেশের মানুষের ভবিষ্যৎকে আলোকময় করে তোলার লক্ষ্যেই।
আধুনিক প্রযুক্তি করায়ত্ত হলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। আজ যে দেশ ডিজিটালের আওতায় এসেছে, তার জন্যই মানুষ এক মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রে থাকা স্বজনদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারে। এই সুযোগটি যে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা পাচ্ছি, তা, তো স্বীকার করতে হবে।
আমাদের সমাজে নানা সংস্কার রয়েছে, তার মধ্যে কুসংস্কারের ছড়াছড়ি। ধর্মান্ধতাও সমাজে রয়েছে। মানুষকে হতে হবে আধুনিক একজন মানুষ। দেশে প্রযুক্তির যে উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং এটার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা, যেমন একটি সুখবর। আবার এটাও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ধর্মান্ধব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত সমাজকে পেছনে টেনে নেবার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিকমতো প্রতিহত করা হচ্ছে না বলে আমরা মনে হয়।
তরুণদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই; তা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও স্মার্ট বিষয়টি আসতে হবে। সরকার প্রধানের এ কথাটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য। সহজ একটি উদাহরণ এ ক্ষেত্রে টানতে হচ্ছে, ব্যাংকিং খাতে বেসরকারি ব্যাংকিং ব্যবস্থার যে প্রসার, চোখে পড়ারর মতো। শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করলে, বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে কমপিউটার ব্যবহার তথা আধুনিক প্রযুক্তিকে কম সময়ের মধ্যে আÍস্থ করে নেয়। কিন্তু সরকারি ব্যাংকিং খাত ও সরকারি অফিস আদালত ডিজিটালের আওতায় আসে ধীরেধীরে।
প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ে তোলার জন্য আওয়ামী লীগ ইশতেহারে যে ঘোষণা বা প্রতিশ্রতি দিয়েছে, আমরা আশা করি, তা লক্ষা করবে। এটাও প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায় যে, দেশকে প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক বেশ আগেই শুরু করেছেন। ঝকঝকে বাংলাদেশ পেতে হলে এর প্রসার ও ব্যাপীর সীমা আরো বাড়াতে হবে, এ কারণেই বস্তুত: নির্বাচনি ইশতেহারে প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা প্রতিশ্র“তি সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্বেউ যদি মনে করেন, প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা কি এমন কঠিন, তা, নিশ্চয় অজ্ঞতায় ভুগছেন। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জামায়াত বহু বছর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তারা দেশকে কতটা প্রযুক্তিনির্ভর বা প্রযুক্তির উৎকর্ষ ঘটাতে পেরেছে, এ প্রশ্ন যদি করা হয়, বলতে হবে, তেমন কিছুই করেনি। তাহলে কি আমরা বলবো, তখন বিশ্বের অন্যদেশ প্রযুক্তির উন্নতি ঘটায়নি, যে বাংলাদেশে কিভাবে হবে, কেউ যদি ঠিক এমনটি ভাবেন, তাহলে ভুল ভাবছেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বহু আগেই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ে নিতে কাজ শুরু করে দিয়েছিল। সেটা দেখেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অপশক্তি তার গুরুত্ব বোঝেনি। কিন্তু গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশকে কত দ্রুত সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়, তাতে মনোযোগ স্থির করেছেন। আমরা আশা করি, ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে জয়ী তিনি সরকার গঠনে সক্ষম হলে, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাসহ অন্যান্য যে প্রতিশ্র“তি ইশতেহারে ঘোষণার মাধ্যমে জাতির কাছে তুলে ধরা হয়েছে, তা, ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করবেন। কোনও বাধা, প্রতিকূলতা এ ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারবে না।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম;
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ;
সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই;
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।