বরিশাল জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক তরুণ উদীয়মান নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র এবং প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী একে ফায়জুল হকের বড় ছেলে ফাইয়াজুল হক রাজু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানাড়ীপাড়া) ঈগল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। রাজুর বাবা চারবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে এখানে তার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। এ আসনে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজু। তার জনপ্রিতায় টেনশনে পড়েছেন জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান।
আসন্ন নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন রাজু। তবে এ আসনটিতে জোট থেকে মেননকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে রাজু নেতাকর্মীদের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দাদা ও পিতার মতোই সততা ও যোগ্যতা দিয়ে এলাকাবাসীর সেবা করতে চান বলেও জানিয়েছেন রাজু।
এদিকে নৌকা প্রতিক পেয়েও স্বস্তিতে নেই মেমন। তার জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজু। এরইমধ্যে উঠান বৈঠক ও সভাগুলোতে ভোটারদের অংশগ্রহণ বিরোধী শিবিরের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের মারধর, কর্মীদের নিপীড়ন ও জীবন নাশসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজু।
রাজু নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ অনেকটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে বাগিয়ে এনেছেন। নৌকার সমর্থকদের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নৌকার প্রার্থী মেননের সঙ্গে না থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে কাজ করছেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে।
সরেজমিনে ঘুরে এবং ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের একক থাকায় শাহে আলম সহজেই নির্বচিত হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের শরীক হয়ে নৌকা প্রতীক পান মেনন। তবে এ আসনে তার নিজ দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। এ আসনে তার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা না থাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মী বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। ফলে রাজনীতির হিসাব নিকাশে নতুন প্রজন্মের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে পরিবর্তনের হাওয়ায় কিছুটা হলেও টেনশনে রয়েছেন রাশেদ খান মেনন।
এদিকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাইকে মনোনয়ন দিতে না পারায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে গণমুখী ও উৎসবমুখর করতে আহবান জানান। তারই ধারাবাহিকতায় এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন ফাইজুল হক রাজু।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় নেতা-কর্মীরা এটা মেনে নিতে পারছেন না, বিধায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রার্থীর প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। ফলে হেভিওয়েট এ প্রার্থী বিপুল পরিমাণ জনসমর্থন নিয়ে রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে।
ঈগল প্রতীকের ফাইয়াজুল হক রাজুর মতে, দক্ষিণাঞ্চলে যত উন্নয়ন হয়েছে তা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পদ্মাসেতু, পায়রা বন্দরসহ নানান উন্নয়ন এ সরকারের আমলেই হয়েছে। তবে কী কারণে যেন গত ৫ বছরে নদী বেষ্টিত বানারীপাড়া-উজিরপুর উপজেলার এ আসনের গ্রামীণ জনপদগুলোতে অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। নদী ভাঙন আর গ্রামীণ জনপদের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট নিয়ে এখনও বিপাকে সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেন, ভোটের পর আর কেউ এলাকায় থাকে না, জনগণের খোঁজ নেয় না। এ অভিযোগের কারণে জনগণের সেবা করার জন্য তাদের প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। এবার আর ভোট নিয়ে টালবাহানা করার সুযোগ নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাই যোগ্যতা প্রমাণের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এ আসনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলেও প্রত্যাশা করেন।
যদিও নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেনন বলছেন, মাঠপর্যায়ে নৌকার অনেক সমর্থন রয়েছে। মানুষ অপেক্ষায় আছেন কখন নৌকায় ভোট দেবেন। আর এগুলো দেখেই হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভীত হয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।