ড. কাজী এরতেজা হাসান
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে দুই নাম্বারে হয়েছে ‘কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান।’ সময়ের সঙ্গে তাল রেখে শিক্ষাকে যদি এগিয়ে নেওয়া না যায়, তাহলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা, তা কতটা কর্মোপযোগী ও যুবকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চিত করতে পারে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে শুধু পুঁথিগত বিদ্যার ওপরে ভরসা করে থাকা যায় না। তবে পুঁথিগত বিদ্যার প্রয়োজন নেই এটা বলা যাবে না। এটাও গভীরভাবেই প্রয়োজন আছে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার আমূল একটি পরিবর্তন ঘটে গেছে। প্রথমেই যদি আমাদের দেশের দিকে চোখ নিবদ্ধ করি, তাহলে কিছটা পরিষ্কার হয়। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ায় আÍনিয়োগ করেন। দেশকে ডিজিটালাইস্ট করার যে স্বপ্ন দেখছিলেন, তা, নিখুঁতভাবে বাস্তবায়নে তিনি কর্ম-উদ্যোগী হন। হয়তো অনেকের মনে থাকবার কথা, সে সময় দেশের এক শ্রেণির মানুষ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যায়কে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে তুড়ি সেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিষয়টি কি এটা না বুঝে বিজ্ঞানমনস্কহীন এসব মানুষ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে হাসি-তামাশায় মেতে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে উপহাসে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। এ থেকে যেমন বোঝা গেছে, বিএনপি এবং স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক জামায়াত কতটা যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিরোধী। অথচ আপনারা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন, বিএনপির পলাতক ও দণ্ডিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে ভিডিওতে বক্তব্য ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সাইবার সন্ত্রাসীরা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কি পরিমানে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে বেড়িয়েছে এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছে। অথচ বিএনপি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে এমন কোনও নেতিবাচক কথা নেই যা বলেনি। অথচ দেশ ডিজিটালের আওতায় আসায় মানুষের বহুমুখী সুবিধা এনে দিয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্বে বাংলাদেশ যদি এ থেকে পিছিয়ে থাকতো, তাহলে আমাদের নতুন প্রজšে§র জন্য বহু ক্ষতি বয়ে আনত। কিন্তু বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে চলার পথ করে দিয়েছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে। তাই আজ লাখ লাখ মেধাবী ছেলে-মেয়ে আউডসোসিং হিসেবে ঘরে বসে মোটা অংকের অর্থ আয়ে সক্ষম।
হাতে-কলমে শিক্ষা বলে একটি কথা চালু আছে আমাদের গ্রাম বাংলাতেও। যারা হাতে কলমের শিক্ষা জানে, তারা সাধারণত বসে থাকে না। তাদের কাজের অভাব হয় না। শেখ হাসিনা সরকার দেশের ভিন্ন জেলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে যে মহাপরিকল্পনা হাতেহ নিয়েছে। এটার দ্রুত বাস্তবায়নে দেশে দক্ষজনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে। দেশের বহু মানুষ বিদেশে কর্মরত আছে। তাদের বিদেশের মাটিতে অন্যদেশের শ্রমিকদের সঙ্গে তীব্র লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। অন্যদেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে আসেন, তারা অনেক দক্ষ শ্রমিক হিসেবে আসেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিকরা দক্ষ হন বিদেশে গিয়ে কিন্তু তাদের জন্য যদি দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হত, তাহলে বিদেশে তাদের প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবেলা করতে হত না।
দেশে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রক্রিয়াধীন আছে আরো নতুন ক-টি। আমরা আশা করবো, সরকার যেমন প্রত্যেকটি জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তেমনি আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে, বঙ্গবন্ধুকন্যা ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আরো অধিক সংখ্যক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবেন।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ গত বুধবার ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে যে ১১টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা, তিতি পূরণ করায় আত্মনিয়োগ করবেন। ১১টির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ হলো- কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। আমরা মনে করি, ইশতেহারে এ বিষয়টির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেছে, তা পূরণ তো করবেই, কিন্তু আমরা বলতে চাই- কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে আন্তর্ভুক্ত করার জন্য সাধুবাদ। দেশে যে মানবসম্পদ রয়েছে। তাদের কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান করার সুযোগ পরিকল্পিতভাবেই সৃষ্টি করতে হবে। এর কি বিকল্প আছে আমরা জানি না।
জাতির জনকের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওয়াদা কখনও বরখেলাপ করেন না। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রেকর্ড তার নেই। বিগত জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি যে প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন, তা, পূরণ করেছেন। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মাট বাংলাদেশে’ রূপান্তর করা হবে; তার প্রক্রিয়া এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনী ইশতেহারে যে ১১টি বিষয় তা নিয়ে নানা গণমাধ্যমে বিশিষ্টজনেরা নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোকপাত করছেন।
প্রতিশ্রুতিগুলোকে কতদ্রুত বাস্তব করে তোলা যায়, এ নিয়ে তারা নিজস্ব মতামতও ব্যক্ত করছেন। প্রতিটি দেশের জন্য মানবসম্পদ বড় বিষয়। আমরা এ দিক থেকে এগিয়ে রয়েছি। তবে আমাদের যে মানবসম্পদ আছে, তাকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো না যায়, তা, দুঃখজনক হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগের আগের সরকারগুলো এ নিয়ে খুব একটা ভেবেছে বলে মনে হয় না। দেশকে উন্নতি সোপানে নিয়ে যেতে দেশের মানবসম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে, এই ধারানায় তারা আস্থা রেখেছিলেন বলে মনে হয় না। কারণ ২৯ বছর ধরে বাংলদেশকে শাসন করেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। তারা দেশকে যতটা পেরেছে লুটেপুটে খেয়ে দেশকে নিঃস্ব করে তুলেছে। নিজেরা অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে। দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে কিছু করেনি। কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনও পরিকল্পনা নেয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দুরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি তার প্রজ্ঞা দিয়ে দেশকে যেভাবে উন্নতির সোপানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাসহ অন্য প্রতিশ্রুতি পালনের মাধ্যমে দেশকে কাঙ্ক্ষিত উন্নতির দোয়ারে নিয়ে যাবেন।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম;
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ;
সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই;
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।