পাবনা-১ আসনের নির্বাচন ঘিরে নৌকা ও ট্রাক প্রতিক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, হামলা, মামলা ও নাশকতার ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আতংক আর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হচ্ছে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা ঘিরে। সরকার দলীয় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের অধ্যাপক আবু সাইয়িদের অনুসারীদের মধ্যে চলছে এই ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ভোটারদের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নৌকা প্রতিকের প্রার্থী অ্যাডভোকটে শামসুল হক টুকুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন তারই পুত্র বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেড়া পৌরসভার মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন শামসুল হক টুকুর আপন ভাই বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন।
মূলত চাচা-ভাতিজাই নির্বাচনী মাঠ প্রতিপক্ষের ন্যায় গরম করে রেখেছেন। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, তাদের মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
নৌকা প্রতিকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আসিফ শামস রঞ্জন অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের সমর্থকরা নৌকা প্রতিকের প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনী গণসংযোগ, পথ সমাবেশ ও নির্বাচনী মিছিলে নানাভাবে হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ী ভাংচুর ও ধাওয়া দিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মিকে মারধর করেছে। আমাদের প্রচারযন্ত্র ভাংচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচনী শোডাউনের নামে তারা মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়েছে। সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসে ঢুকে ভাংচুর করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও তারা ভাংচুর করেছে।
আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলীয় অফিসে হামলা, ভাংচুর ও নেতাকর্মিদের মারধরের অভিযোগে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করছেন না। মামলার আসামীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভা সমাবেশ ও মিছিলে উপস্থিত থাকলেও তাদের অজ্ঞাত কারনে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি জেনেছি রবিবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একইমঞ্চে মামলার অন্যতম আসামী বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন, সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ দেলোয়ার, সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামানিক, স্থানীয় শিল্পপতি মতিউর রহমান দুলাল, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানসহ মামলার অন্যান্য আসামীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। কিভাবে মামলার আসামীরা পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে সেটা আমার বুঝে আসে না। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই সকল আসামীরা প্রকাশ্য বিচরণ করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’
এদিকে রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আব্দুল বাতেন, সাবেক পৌর মেয়র মিরাজূল ইসলাম প্রামানিক, শিল্পপতি মতিউর রহমান দুলাল, পরিবহণ ব্যবসায়ী কাফি সরকারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আব্দুল বাতন অভিযোগ করেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকা প্রার্থী শামসুল হক টুকু ও তার ছেলে রঞ্জন। আমাদের নির্বাচনী সকল কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করছে। নেতাকর্মিদের মারধর করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে মিথ্যা মামলা। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ চাই। সেই সাথে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
তারা বলেন, ‘আমাদের মিছিলে হামলা ও মারপিটের অভিযোগে সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেছি। প্রকাশ্যে পৌর মেয়র বাচ্চু নৌকা প্রতীকের কার্যক্রম চালালেও পুলিশ তাকেসহ আসামীদের ধরছে না। আসলে তারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।’
এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ১টি মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। পৃথক তিনটি মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
আসামীরা প্রকাশ্য ঘুরলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নে ওসি আনোয়ার বলেন, ‘আসামী ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। তবে কিছু আসামী বেড়া থানা আওতাভ‚ক্ত হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
এদিকে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাথিয়া থানার রিক্যুজিশন পেলে আসামী ধরতে সহায়তা করা হবে।’