#উপহারের গহনা প্রায় দুইশ ভরি। #ঢাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল ফ্লাট ও ব্যবসায়িক দোকান।
পিরোজপুর ২ আসন থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন মো. মহিউদ্দিন মহারাজ। এক সময়ের ছাত্রদল নেতা মহারাজের ভাগ্য বদলেছে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সহচার্যে এসে। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেছেন টাকার কুমির। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা দেখলে মনে হবে গত ৭ বছরে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। নিমিষেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। ২০১৬ সালের হলফনামা থেকে জানা গেছে, মহিউদ্দিন মহারাজের বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৫ টাকা। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ চার কোটি ৭০ লাখ টাকা।
যা কয়েকগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে। ১৭ লাখ টাকার আয় এখন ২ কোটি ৮১ লাখ ১০৭২ টাকা। যা সাত বছরের বেড়েছে প্রায় ১৪ গুণ। ৭ বছর আগে তার স্ত্রীর কোন আয় না থাকলেও এখন তার আয় ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ১০ টাকা। যা ২০১৬ সালের তার আয় থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা বেশি।
এছাড়া অস্থাবর আয়ের মধ্যে নগদ টাকা ও ব্যবসার মালামাল রয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৬৯ লাখ ২ হাজার ৬২৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি ইফতি ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডে রয়েছে ১৫ লাখ টাকা এবং ইফতি ইটিসিএলে রয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, তেলিখালি শাখায় ৫টি ডিপিএসে রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এক কোটি ৪০ লাখ টাকার একটি গাড়িতে চড়েন তিনি। স্বর্ণ রয়েছে ৫০ ভরি। হলফনামায় তা উপহার পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য অর্থকোটিরও বেশি। তার ছেলে এবং স্ত্রী মিলিয়ে রয়েছে আরও ১৪৮ ভরি স্বর্ণ। যারা বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া ২৫ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকার রয়েছে টিভি ফ্রিজসহ নানা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার রয়েছে খাট, সোফা ও চেয়ারসহ নানা আসবাবপত্র। রয়েছে একটি পিস্তল ও বন্দুক। যার মূল্য যথাক্রমে ৩ লাখ ও ৫৫ হাজার টাকা।
শুধু তারই নয়, টাকার কুমির হয়েছে তার স্ত্রী ও পুত্র। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা ও ব্যবসার মালামাল রয়েছে ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৯ টাকা। সঞ্চয়পত্র জমা আছে ৫০ লাখ টাকা এবং মেটলাইফ অ্যালিকোতে ৪টি ডিপিএস ও দুইটি বীমায় মোট সঞ্চয় ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৭ টাকা। ইস্কাটনের ঢাকা ব্যাংকে রয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া এফডিআর করা আছে ৭০ লাখ টাকা। যা বিধি অনুযায়ী ২০২৪-২৫ বর্ষে আয়কর নথিতে দেখানো হবে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, খাট, সোফাসেট, আলমিরাসহ নানা আসবাবপত্র তিনি উপহার পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
মহিউদ্দিন মহারাজারের স্থাবর সম্পত্তিও কম নেই। হলফনামায় দেয়া তথ্যমতে, ভান্ডারিয়া উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ১০ দশমিক ২৫ একর কৃষি জমি রয়েছে তার। যার বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টাকা। ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ১৩৮ শতক জমি রয়েছে, যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ২৫ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা জেলার শ্যামলাপুর মৌজায় রয়েছে জমি। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৭৫ লাখ ৪হাজার টাকা। ভা-ারিয়া উপজেলার চরখালীতে রয়েছে ৬৮ শতক জমি। যার শতক মূল্য ১৫ লাখ ৪০ হাজার। ঢাকা জেলার কাঠাল দিয়া মৌজায় ১১২৫ অযুতাংশ, শ্যামলাপুর মৌজায় ০৬৫০ অযুতাংশ এবং ভা-ারিয়া উপজেলার হরিণপালা মৌজায় ১৮০ শতক জমি রয়েছে। যার শতক মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৬৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। বসুন্ধরা সিটিকে ১৬৫.০২ বর্গফুটের একটা দোকান রয়েছে। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে, ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা। ২৫০ বর্গফুট ও ১৭৮.৯২ বর্গফুটের ২টা টিন সেড পাকাঘর রয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ ২০ হাজার। এছাড়া ৩৫১২ বর্গফুটের একতলা দালান রয়েছে, যার নির্মাণ ব্যায় ২৩ লাখ ৬ হাজার ৩২২ হাজার। এছাড়া পৈত্রিক বাড়ী দালান নির্মাণে বিনিয়োগ ৮ লাখ টাকা। ৪/১ অংশ নির্মাণ বাকী, যার একটি ফ্লোরের মূল্য ১ কোটি ৪৫ হাজার টাকা। জুনিয়া গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মার্কেট ৩১৬৮ বর্গফুটের বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার ৩৫৮ টাকা। এছাড়া ১৪০০ বর্গফুট একতলা দালান নির্মাণে ব্যয় ২৩ লাখ টাকা। ভা-ারিয়ার হরিণপালা ইকোপার্ক সংলগ্ন ১৮৭৫ বর্গফুট ৪ তলা বিশিষ্ট দালান নির্মাণ ব্যয় ৮৭ লাখ টাকা। তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন (সম্মুখে) ইফতি শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের ২য় তলার মূল্য ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ২২১টাকা। ২৩ সালের পিরোজপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট ভা-ারিয়াস্থ ২০ ও ২১নং দোকান পজেশনের জন্য অগ্রীম পরিশোধ ৮৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এবং ২০ নং সীল এর জন্য স্টলের জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ২৫ হাজার ১৮ হাজার ৭১০ টাকা। ঢাকা জেলার বড় মগবাজার মৌজার শান্তা গার্ডেনের ২নং টাওয়ারের ২৬০৫ ও ২৬৯০ বর্গফুটের দুইটি ফ্লাট। যার গাড়ী পার্কিংসহ ক্রয়মূল্য ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা। এছাড়া শ্যামলাপুর মৌজায় ৬ শতাংশ ভূমি রয়েছে। যার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ব্যয় করেছে ২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামেও রয়েছে বিপুল পরিমাণে স্থাবর সম্পত্তি। মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী মৌজায় কবলা ও হেবা কবলামূলে ৩৬৬.৫২ একক জমি রয়েছে। যার দলিল মূল্য ৪৯ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ টাকা।
এছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে একটি দোকান রয়েছে। যার মূল্য ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তুষখালীতে ৫৮০০ বর্গফুটের ৫তলা বাড়িতে বিনিয়োগ ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। কাওরানবাজারে ৩০০.৯ বর্গফুটের একটি ফ্লাটের মূল্য ১৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এতো সম্পত্তির মধ্যে তার ঋণ রয়েছে ২১ কোটি ৪৪ লাখ ৯ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে মো. মহিউদ্দিন মহারাজ সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন না ধরার তার ব্যক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।