দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। তবে শুরু থেকেই এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বিএনপি সারাদেশে চালাচ্ছে নির্বাচন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড।এইবার বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আদালত বর্জনের ঘোষণা দিল বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, সমস্ত জেলা আদালত, সেশন আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিমদের আদালত, মুখ্য জুডিসিয়াল আদালতসহ সমস্ত আদালত বর্জন করবে তারা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ডামি নির্বাচন বর্জন, কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনগণের অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন এবং আইনজীবীদের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের কো কনভেনার সুব্রত চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, শাহ আহমেদ বাদল, ইউএলএফে সমন্বয় সৈয়দ মামুন মাহবুব, এএসএম মোক্তার কবির খান ও মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মহান স্বাধীনতার ৫২ বছর শেষে অবৈধ, বিনা ভোটে, নিশি রাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে নিকসকালো অন্ধকার বাকশাল-২ এ পরিণত করেছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সরকার আর একটি নীলনকশার পাতানো ডামি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। কথিত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য সরকারি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী, অনুগত প্রার্থী প্রভৃতি হরেক রকমের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কারা ডামি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে তাও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।
অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে, হয় আজ্ঞাবহ করেছে, অথবা করায়ত্ব করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে। জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ, সংবিধানের তৃতীয়ভাগে জনগণের মৌলিক অধিকার বিবৃত আছে এবং অনুচ্ছেদ ১০২ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু বেদনাহত চিত্ত নিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, ২৮ অক্টোবরে বিএনপিসহ ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র বিশ্বাসী সব রাজনীতিক দলের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকদের ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্রাক ডাউন করল, তখন নেতাকর্মীদের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার উপেক্ষিত হল। যা দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্য জনক।
আজ পর্যন্ত সরকার বিরোধী দলের গণতন্ত্রকামী ২৩ হাজার ৪৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং মোট দায়ের করা হয়েছে ৬৮৪টি মামলা। আর গত ১৬ সপ্তাহে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে ১৪৮২ জনকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশ ও জাতির এ চরম যুগ সন্ধিক্ষণে দেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় আইনজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ডামি নির্বাচন বর্জন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
কর্মসূচি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, সমস্ত জেলা আদালত, সেশন আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিমদের আদালত, মুখ্য জুডিসিয়াল আদালতসহ সমস্ত আদালত বর্জনের আহ্বান করা হলো।