নির্বাচনী প্রচারণার বিধি-নিষেধে সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো বক্তব্য না দেওয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ( স্বতন্ত্র) গোলাম সরোয়ার টুকুর নির্বাচনী পথসভা এবং জনসভা থেকে বারবার সাম্প্রদায়িকতা এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপস একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এরকম একটি ভিডিও থেকে দেখা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর তালতলী উপজেলার লাউপাড়া বাজারে গোলাম সরোয়ার টুকুর ঈগল প্রতীকের জনসভা থেকে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি বলেন, ‘আমরা মুসলমান, ভোট দেখে শুনে দিবেন’। একই বক্তব্যে হিন্দু মুসলমানের ভেদাভেদ তুলে ধরে এবং পরকালের প্রসঙ্গ টেনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘হিন্দুকে কেন ভোট দিবো, সবাইকে মরতে হবে’।
নির্বাচনী আচরণবিধিতে ভোটারদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ না করার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু লাউপাড়া বাজারের সেই সমাবেশেই তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোসহ হুমকিও প্রদান করেন। তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রিজভী-উল-কবীর এবং সাধারণ সম্পাদক ও ছোট বগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুজ্জামান তনু আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারাভিযান চালানোয় তাদের উদ্দেশ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকি রেখে তিনি বলেন, 'আমি জেলা আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি, একজন নেতার উত্থান পতন কীভাবে করতে হয় সেই কারিশমা আমি জানি।'
তাছাড়া, জনপ্রিয় টেলিভিশনের টিভির ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত হওয়া আরেকটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর গোলাম সরোয়ার টুকুর নির্বাচনী জনসভা থেকে দা এবং মরিচের গুঁড়া নিয়ে নারীদের ভোটকেন্দ্রে পাঠানোর অনুরোধ করছেন। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে টুকুর সমর্থকদের এই দুইটা উপাদান ব্যবহার করতে উপদেশ দেন এ চেয়ারম্যান। সেই বক্তব্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর আত্মীয় সিদ্দিকুর রহমানকে ‘সিদ্দিক দেবনাথ’ বলে আখ্যায়িত করে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, এটি একটি চেতনার নাম। যে চেতনার বীজ বপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু গোলাম সরোয়ার টুকুর চৌদ্দগুষ্ঠিতে তো কেউ কখনো আওয়ামী লীগ করে নি, তার আত্মীয়-স্বজন সবাই এখনও বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত, বাবা সোবাহান ডিলার ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। সত্তরের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিরোধিতা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামেরও।
তিনি আরও বলেন, টুকু বিয়ে পর্যন্ত করেছেন বিএনপি-জামায়াত মনোভাবাপন্ন পরিবারে। তার শ্বশুর প্রত্যক্ষভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। তাছাড়া, তার আপন বড় ভাই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রইসুল আলম রিপন বলেন, গোলাম সরোয়ার টুকুর পরিবারের প্রতিটি সদস্য এখনও বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। সে যতই আওয়ামী লীগের মুখোশ পরে থাকুক না কেন, তার পক্ষে তো আর আওয়ামী চেতনা ধারণ করা সম্ভব না। সে ওই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চেতনাই ধারণ করবে। তাই গোলাম সরোয়ার টুকুর জনসভা থেকে বিএনপি-জামায়াতের স্টাইলে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য আসবে, সহিংসতা উসকে দেবে এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। আমি অন্তত এতে আশ্চর্য হইনি।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে গোলাম সরোয়ার টুকুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।