প্রকাশ: রোববার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৯:০৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চাষের সময় আর খরচ দুটোই কম হওয়ায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় সরিষা চাষ। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দিন দিন বাড়ছে সরিষার চাষ। বাজারে দাম ভালো থাকায় সরিষায় আশার আলো দেখছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ধরলা, বারোমাসিয়া ও নীলকমল নদসহ বিভিন্ন জেগে উঠা চরের দিকে তাকালে মনে হয় ফসলের মাঠ সেজেছে যেন গায়ে হলুদের সাজে। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রাজার দেশে মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যােগে কৃষি প্রনোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে বিনামূল্যে কৃষকদের উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন আমন কাটা মারাইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরোর চাষাবাদ করা যায়। এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুটি ফসলের চাষে লাভবান হওয়া যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সবমিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো চাষে খরচ করা যায় পাশাপাশি তাদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটানোও সম্ভব।
উপজেলার শ্যামপুর এলাকার কৃষক মনছুর বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও দেড় বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফলন ভাল দেখা যাচ্ছে। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রানটা ভরে যায়।
উপজেলার পূর্বফুলমতি এলাকার কৃষক নুরল আমিন ও কুরুষাফেরুষা এলাকার কৃষক সোবহান বলেন, আমরা দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি ভাল ফলন হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। এছাড়া বিকল্প হিসেবে সরিষার তেলও ব্যবহার করতে পারবো এবং সয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষার তেলের পুষ্টিগুন মান অনেক বেশী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান চলতি সরিষা মৌসুমে ২ হাজার ৩২০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করাসহ মোট ২ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষা হয়েছে। তিনি আরও জানান কৃষি ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৈলাক্ত ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সাথে কৃষিবিভাগ প্রান্তিক কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রনোদনা দিচ্ছি ও চাষিদের লাভের জন্য দু'ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরী করতে উৎসাহিত করছি।