মহান বিজয় দিবসে সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস বা ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হয়নি মোংলা উপজেলার সরকারী অফিসে। অধিকাংশ সময়ই তালা বন্ধ থাকে এ অফিসটির। অন্য সময়তো দুরের কথা, আজ বিজয় দিবস, এ বিশেষ দিনেও উত্তোলন করা হয়নী জাতীয় পতাকা। কর্তৃপক্ষের আর উপজেলা প্রাসনের তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ ও স্থানীয়রা। অনেকে বলছেন, জাতীয় দিবসে সরককারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনতো বাধ্যতা মুলক, সেখানে খোদ সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিশেষ দিনে পতাকা না উঠানো তা জাতীয় পতাকা অবমাননার সামিল। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি তার জানা নাই, খোঁজ নিয়ে ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, প্রতি বছর এ দিনটি বাংঙ্গালী জাতি বিশেষভাবে পালন করে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংঙ্গালী জাতির নিকট আত্নসমর্পন করে, ফলে স্বাধীন ও সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্ত সকল জাতী ধর্ম-বর্ণ নির্ভিশেষে এ দিনটিকে মর্যাদাপুর্ন সন্মান দেখালেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ দিনটির মর্যাদায় কোন কর্ণপাতই করেনা। এ দিনটিকে সন্মানের সহিদ সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিতসহ সকল প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতার বিজয় সরুপ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও তা মানার ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রাণালয়ের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসুচি মোংলা (সিপিপি) অফিসে। এখানে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই নিয়ম মেনে যথা সময়ে পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সুশিলসমাজের লোকজন।
সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোংলা উপজেলা সিপিপি কার্যালয় বিজয় দিবসটিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। বিশেষ এই দিনটিতে খোদ সরকারি কার্যালয়ে যথা সময়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার (অর্থ) বীর মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল ইজারাদার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বিজয়ের ৫১ বছরের এ দিবসটিতে উপজেলা প্রশাসনের মধ্যকার এ কার্য়লগুলোতে জাতীয় পতাকা না টানানোর দায়ভার কিন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর বর্তায়। ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসুচি অফিসে কেন জাতীয় পতাকা উঠালো না, এই প্রশ্ন ইউএনও কাছে আমাদেরও! এ অপরাধটি রাষ্ট্রদ্রৌহীতার সামিল।
এছাড়াও উপজেলা অনুষ্ঠানে আসা মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বিশেষ দিবসে সরকারী অফিসে পতাকা উঠানো সরকারী ভাবে বাধ্যতা মুলক ঘোষনা খোদ সরকারের। যেহেতু পতাকা উঠায়নী তবে কি অফিসের লোকজন স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে তারা। এটা সম্পুর্ন জাতীয় পতাকা অবমাননার সামিল বলে আমরা মনে করি।
পার্শবর্তী ব্যাবসায়ীরা বলছেন, এ অফিসে একজন সরকারী কর্মকর্তা রয়েছে, তাকে ৩/৪ টি অফিসের অতিরিক্ত দায়ীত্ব পালন করতে হয়। তবে অফিস সহকারী (পিয়ন) যারা রয়েছে তারাতো বিজয় দিবসের পতাকা উত্তোলন করবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্ত অফিসার চলে যাওয়ার সাথে সাথে অফিস পিয়নও চলে যায় আর অফিসের থাকে তালা বন্ধ। অথচো মাস গেলেই মোটা অংকের বেতন-ভাতাদি তুলে নেয় তারা কিন্ত সরকারের আইন বা নিয়োম কোনটাই তোয়াক্কা করে না তারা। তবে বিশেষ দিনে পতাকা না উঠানো এটি খুবই অন্যায়। আমরা জানি স্বস্ব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে সরকারের ঘোষণার পরেও আমরা এ প্রতিষ্ঠানে কোন সময়ই জাতীয় পতাকা দেখতে পারছিনা। এটা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাস্কর বিষয়।
সিঙ্গাপুর মার্কেটের ব্যবসায়ী সাব্বির আহাম্মেদ সহ বলেন, সিপিপি অফিস আমার পাশেই কিন্ত কোন সময়ই এ অফিসে পতাকা উঠানো হয় না। আর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের এ বিশেষ দিনে জাতীয় পতাকা থাকা আবশ্যক। তাদের কি পতাকা উত্তোলনে কোন বিধি নিষেধ আছে, নাকি নিতান্ত অবহেলার কারণে পতাকা উত্তোলন করেননি। আমাদের চোখে পড়েছে পতাকা না টানানোর বিষয়টি, এটি অবহেলা তাই এর বিরুদ্ধে সরকারী ভাবে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া উচিত।
এব্যাপারে ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসুচির (সিপিপি) খুলনা জোনাল কর্মকর্তা মোঃ আঃ লতিফ বলেন, ওখানকার কর্মকর্তা অন্য উপজেলারও দায়ীত্বে রয়েছে, তবে অফিসে অন্য লোক আছে। মহান বিজয় দিবসের এ দিনে তারা যদি অফিসে জাতীয় পতাকা না উঠায় তবে ঢাকা অফিসে জানানো হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মোংলা উপজেলায় কেবল মাত্র এক সপ্তা হয় জয়েন্ট করেছি। কোন অফিস কোন জায়গায় এবং উপজেলার বাহিরে কতগুলো অফিসে রয়েছে জানা নাই। তবে বিশেষ এই দিনে যদি কেউ জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করে থাকে তবে তদন্ত মাধ্যমে শোকজ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় উপজেলার এ কর্মকর্তা।