সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
‘ডুপ্লি’দিয়ে চলছে ঢাকা ওয়াসার মিটার রিডিংয়ের কাজ
ভুতূরে বিলের ভয়ঙ্কর ফাঁদ
#মাসিক কিছু টাকা দিয়ে তাদের পোষেন মিটার রিডাররা। #ডুপ্লিরাও গ্রাহকের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে আদায় করেন উপরি।
খান শান্ত
প্রকাশ: রোববার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৯:৩৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা ওয়াসার নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। নিয়ম অনুযায়ী বাসায় গিয়ে মিটারের রিডিং দেখে পানির বিল ইস্যু করার কথা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিটার রিডাররা সে কাজটি করেন না। ঘরে বসে মনগড়া রিডিং বিলে তুলে দেওয়ায় বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াসার মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আছে, তারা নিজেরা কাজ না করে বহিরাগত লোক ভাড়া করেন। তাদেরই মিটারের রিডিং দেখতে বাসায় বাসায় পাঠানো হয়। এ রকম ভাড়াটে বহিরাগতরা ‘ডুপ্লি’ নামে পরিচিত। তারাও রিডিং না দেখে ঘরে বসে বিল করে দেন। একেকজন মিটার রিডারের রয়েছে একাধিক ডুপ্লি। মাসিক কিছু টাকা দিয়ে তাদের পোষেন মিটার রিডাররা। ডুপ্লিরাও গ্রাহকের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে উপরি আদায় করেন। ঢাকা ওয়াসায় বছরের পর বছর চলছে এমন অপকীর্তি। দৈনিক ভোরের পাতার দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ডুপ্লিদের নিয়ে এসব চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। খোঁজ মিলেছে  প্রায়  শখানেক ডুপ্লির। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্নীতি ঠেকাতে ২০০০ সালে ‘ঢাকা ওয়াসা শুদ্ধি অভিযান’ নামে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সবাই ওয়াসার কর্মকর্তা। প্রতি মাসে বৈঠক করে এক হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা নেওয়া ছাড়া কার্যত দুর্নীতি বন্ধে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছেন না।

গত মাসে ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় ওয়াসার প্রতিটি অঞ্চলের অঞ্চলপ্রধান ও উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাদের কাছে একটি নোটিশ পাঠান। সেই নোটিশে তিনি লেখেন, ‘ঢাকা শহরের কিছু কিছু এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে, ওয়াসার লোক পরিচয়ে অনেক বাড়িওয়ালার কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করা হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকে এটাও বলছেন, মূল বিলিং সহকারী (মিটার রিডার) বা রাজস্ব পরিদর্শকের (সিনিয়র মিটার রিডার) বদলে ডুপ্লিরা এ কাজ করছেন। সব রাজস্ব জোনপ্রধানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দেওয়া হলো। এ ধরনের অভিযোগ ঢাকা ওয়াসার শুদ্ধি অভিযান কমিটির মাধ্যমেও যাচাই করা হচ্ছে। সামান্যতম সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিরো টলারেন্স দেখিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ নির্দেশনা দেওয়ার পরও ডুপ্লিদের আনাগোনা কমেনি। এ ব্যাপারে উত্তম কুমার রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম মোস্তফা কামাল মজুমদারও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। 

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী এলাকার (জোন-৭) মিটার রিডার সাইফুল ইসলাম নিজে কাজ না করে মো. হেলাল নামের একজনকে দিয়ে বিল করান। বিনিময়ে হেলালকে মাসিক বেতন দেন সাইফুল। হেলাল বলেন, ‘সাইফুল ভাই বেতন দেন। তার হয়ে আমি কাজ করে দিই। ছয় মাস ধরে এ কাজ করছি।’ মিটার রিডার সাইফুল বলেন, ‘যখন মিটারের রিডিং দেখে শেষ করা যায় না, তখন এ রকম সাপোর্টিং হ্যান্ড নিতে হয়। এ ছাড়া মিটারের একটি কাভার থাকে। ওটা একজনের পক্ষে ওঠানো কঠিন। তখন আরেকজনের হেল্প নিতে হয়। এ জন্য মাঝেমধ্যে হেলালকে রাখি।’ 

মিটার রিডার আইনুল ইসলামের ডুপ্লি হিসেবে কাজ করেন সোহেল। তিনি বলেন, ‘আমি আইনুল ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করি। সব হোল্ডিংয়ে তো যেতে পারি না। কিছু হোল্ডিংয়ে যাই। বাকিটা গড় বিল করি। এ জন্য আইনুল ভাই আমারে কিছু টাকা দেন।’ এ ব্যাপারে আইনুল বলেন, ‘অনেক হোল্ডিংয়ে যেতে পারি না। এ জন্য মাঝেমধ্যে ওকে রাখি। ও মাসে কয়েক দিন যায়। এ রকম অনেকেই ডুপ্লি দিয়ে কাজ করায়।’ 

একই মিটার রিডার এক এলাকায় থাকলে বেশি মাত্রায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান স্বাক্ষরিত গত ১৪ ডিসেম্বরের এক অফিস আদেশে বলা হয়, তিন মাসের বেশি একই এলাকায় একজন মিটার রিডারকে রাখা যাবে না। এর পর অনেককে বদলি করা হয়। তবে টানা ৮ থেকে ১০ বছর ধরে আছেন এমন অনেক মিটার রিডারকে বদলি করা হয়নি। অভিযোগ আছে, এসব মিটার রিডারের সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের বড় কর্মকর্তাদের বিশেষ সখ্য রয়েছে।

মিটার রিডার আলী আজম ১৪ বছর ধরে যাত্রাবাড়ী এলাকার কর্মরত। একইভাবে আবুল কালাম আজাদ ১০ বছর, আবদুস সামাদ ১০ বছর ও আসিফ আহমেদ চাকরির পর থেকে একই জায়গায় কর্মরত। গ্রাহকের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে অবৈধ পানি সংযোগের বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আসিফের বিরুদ্ধে। বসুন্ধরা এলাকার অনেক ভবনের অবৈধ পানির লাইন ও গভীর নলকূপের বৈধতা দিয়েছেন আসিফ আহমেদ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ওয়াসার নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করে অবৈধ গভীর নলকূপের বৈধতা দেওয়ার সুযোগ আছে।
 
দুর্নীতির কারণে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা ১৪ মিটার রিডারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। তবে কিছুদিন বাদেই অব্যাহতি পাওয়া কাজী দেলোয়ারকে আবারও ১ নম্বর জোনে নিয়োগ দেওয়া হয়। রিয়াদুল ইসলামকে দেওয়া হয় জোন-৪-এ। এই রিয়াদুল ইসলাম ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের পিডি রফিকুল ইসলামের ভাগনে হওয়ায় চাকরি ফিরে পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হাদী ও হৃদয়কেও আবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যরাও চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য ওয়াসায় ঘোরাঘুরি করছেন। গত ২৬ এপ্রিল মিটার রিডার পদে ১৪ জনকে নতুন করে নিয়োগ দেয় ওয়াসা। তাদের কোনো এলাকার বিল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বিপরীতে ১৬ মিটার রিডারকে দুটি এলাকার বিল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তিকে একাধিক এলাকার বিল দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ায় তারা গ্রাহককে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না। এর মধ্যে কম বিল করে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার দায়ে সম্প্রতি ওয়ারেস মুন্সিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর জোন-১-এর মিটার রিডার জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকা ওয়াসার মুখপাত্র মোস্তফা তারেক ভোরের পাতাকে জানান, ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এর পরও এ ধরনের কাজ কেউ করলে। যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই মিটার রিডার দীর্ঘদিন একই এলাকায় চাকরিতে বহাল থাকলে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ডুপ্লির বাহার :মিটার রিডার খায়রুল ইসলাম নিজে কাজ না করে সেলিম নামে এক বহিরাগতকে দিয়ে কাজ করান। বিলিং সহকারী আব্দুর রাজ্জাক পায়েল নামে একজনকে এ কাজে নিয়োগ করেছেন। আর বিলিং সহকারী ফয়সালের ডুপ্লি কামাল। জোন-২ এর মিটার রিডার শরিফ হুসেইনের ডুপ্লি মিজান। দৌলত হকের ডুপ্লি মাজহারুল, শাকিল আহম্মদের ডুপ্লি আব্দুস সাত্তার, সিদ্দিকুর রহমানের ডুপ্লি হারুন, ইমরান আহমদের ডুপ্লি জহির, তাজিম মাস্টারের ডুপ্লি রুবেল, শাহ আলমের ডুপ্লি জাহাঙ্গীর, আবুল কালামের ডুপ্লি জনি, শহিদুল ইসলামের ডুপ্লি হুমায়ুন, আব্দুল গনীর ডুপ্লি মামুন, আব্দুল রাজ্জাকের ডুপ্লি পায়েল, রাজুর ডুপ্লি মামুন, ওকিল আহাম্মেদের ডুপ্লি আব্দুল রউফ, হুমায়ুন কবির সম্রাটের ডুপ্লি সোহেল, মো. শাহ আলমের ডুপ্লি মো. আজম, শহিদুল ইসলামের ডুপ্লি মো. হুমায়ুন, আব্দুল গনির ডুপ্লি মো. মামুন, আকিল আহমেদের ডুপ্লি আব্দুর রব, রেদওয়ান ইসলামের ডুপ্লি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ আলী আজমের ডুপ্লি মো. রুবেল। এ রকম অসংখ্য ডুপ্লি ঢাকা ওয়াসায় কাজ করছে বলে জানা যায়। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]