আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির নিজস্ব চাওয়া আছে। তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেসব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে না।’
জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠকের পর শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত এলো। ফলে এদিন (রবিবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন শেষে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
এর আগে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দলগুলো আসন সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্নভাবে আলোচনা চালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের সাড়া মেলেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্ভার জয়ের ক্ষেত্রে 'গলার কাটা' হওয়ায় সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল জাপা ও ১৪ দলের শরিকরা। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে বলেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলটির শরিক ও মিত্র দলগুলো অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র এমনটি জানালেও তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এমনকি আসন সমঝোতা নিয়ে শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছে দলটির নেতারা। তবে বৈঠক শেষে কোনও নেতা কথা বলেননি।
তবে সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার কোনো আসন জাপাকে দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাপার এবারের দাবি ছিল ৫০ আসন। ৩৫-এর কম আসনে সমঝোতায় রাজি নয়—এমন মনোভাবও জানিয়েছিল দলটি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় মোট ২৬টি আসন নিশ্চিত করেছে জাতীয়। সমঝোতা হওয়া ২৫টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী থাকবে না বলে জানা গেছে।
নৌকা হারালেন যে ২৫ প্রার্থী-
ঠাকুরগাঁও-৩ মো. ইমদাদুল হক, কিশোরগঞ্জ-৩ মো. নাসিরুল ইসলাম খান, রংপুর-১ মো. রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ তুষার কান্তি মণ্ডল, নীলফামারী-৪ মো. জাকির হোসেন বাবুল, কুড়িগ্রাম-১ মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, কুড়িগ্রাম-২ মো. জাফর আলী, গাইবান্ধা-১ আফরুজা বারী, গাইবান্ধা-২ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সিলেট-৩ হাবিবুর রহমান, নীলফামারী-৩ মো. গোলাম মোস্তফা, বগুড়া-৩ মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. শাহজাহান আলম, চট্টগ্রাম-৮ নোমান আল মাহমুদ, বগুড়া-২ তৌহিদুর রহমান মানিক, সাতক্ষীরা-২ মো. আসাদুজ্জামান বাবু, ফেনী-৩ মো. আবুল বাশার, চট্টগ্রাম-৫ মোহাম্মদ আবদুস সালাম, পটুয়াখালী-১ মো. আফজাল হোসেন, ময়মনসিংহ-৫ মো. আব্দুল হাই আকন্দ, ময়মনসিংহ-৮ মো. আব্দুছ ছাত্তার, পিরোজপুর-৩ মো. আশরাফুর রহমান, হবিগঞ্জ-১ ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, মানিকগঞ্জ-১ মো. আব্দুস সালাম, বরিশাল-৩ সরদার মো. খালেদ হোসেন।
১৯৯৬ সালে জাপাকে নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি হয়েছে দুই দলের মধ্যে। এবার জাপা পৃথক নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষই আসন বণ্টন করতে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে আলোচনা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। সবশেষ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।